পাগলা মসজিদের দানবক্সে মিলল ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া টাকা গণনা চলছে। ছবি: স্টার

চার মাস ১২ দিন পর আজ শনিবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খুলে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা।

আজ সকাল ৭টা থেকে সিন্দুক খোলা হয় এবং এখন চলছে গণনার কাজ।

জেলার নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে লোহার দানবাক্সগুলো প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর খোলা হয়।

এর আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে রেকর্ড আট কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল।

টাকা ছাড়াও মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তার উপস্থিতিতে আজ সকাল ৭টায় ১১টি দান সিন্দুক খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।

প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।

দানবাক্স খোলার সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও মসজিদ কমিটির সদস্যসহ অন্যরা।

আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও পাগলা মসজিদের এতিমখানাসহ দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশো শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৪০০ জন টাকা গণনার কাজ করছেন।

লোহার দানবাক্স থেকে টাকা বের করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করেন এই মসজিদে। দানকারীরা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়। আর এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ছয়তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রজেক্ট করা হবে। এতে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এমন আকর্ষণীয় কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।

এর জন্য প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, 'পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। আজকের টাকা গণনা শেষে আগের টাকার সঙ্গে এ টাকাও ব্যাংকে জমা হবে।'

জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে এই দানের টাকা থেকে।

দানবাক্স থেকে টাকা ভরা হয় বস্তায়, নেওয়া হয় গণনা করতে। ছবি: স্টার

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, 'আজ সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিদিন এসব সিন্দুকের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকেন।'

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে।

কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago