বিভিন্ন জেলায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আজ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। এতে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ছয় দফা দাবি আদায়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবিগুলো হলো:
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতির হাইকোর্টের রায় বাতিল, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা। ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল এবং সেই নিয়োগবিধি সংশোধন। ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করে চার বছর মেয়াদি মানসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন এবং পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স চালু। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।
নরসিংদীতে মহাসড়ক অবরোধ
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পুলিশ লাইন এলাকার সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। নরসিংদীর সরকারি-বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। এর ফলে মহাসড়কের সাহেপ্রতাপ এলাকায় উভয় দিকে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।

টাঙ্গাইলে মহাসড়ক অবরোধ
একই দাবিতে টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার রাবনা বাইপাস এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, অবরোধের কারণে ব্যস্ত এই মহাসড়কের দুই প্রান্তে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে এবং যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খুলনায় রেলপথ অবরোধ
খুলনায় চারটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেন। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে খুলনা রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নগরীর বৈকালি জংশন এলাকায় শিক্ষার্থীরা আটকে দেন। এর ফলে খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
অবরোধের কারণে চিত্রা, রকেট ও মহানন্দা এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য ট্রেন খুলনা স্টেশন থেকে ছাড়তে পারেনি। এতে প্রচণ্ড গরমে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

খালিশপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি মানা না হলে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার হবে এবং আগামীকাল তারা খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের দাবি পেশ করবেন।
বরিশালে অবরোধ
বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কয়েকশ শিক্ষার্থী আজ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। এর ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ ২২টি রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয় এবং তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি সমাপ্ত করে।
বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার জানান, দুপুর ১২টা থেকে ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
চট্টগ্রামেও সড়ক-রেল অবরোধ
ছয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
সাড়ে ১১টায় নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশে নানান স্লোগান দেন। এ সময় ষোলশহর স্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন আটকা পড়ে।
Comments