বকেয়া মজুরি: রোববার সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের ঘোষণা চা শ্রমিকদের

বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে কালাগুল চা-বাগানের শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

বুরজান চা-কোম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান ও একটি কারখানার ২৫০০ শ্রমিকের ২০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আগামী ৪ মে রোববার সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে চা-শ্রমিক ও চা-বাগান রক্ষা কমিটি।

কমিটির আহ্বায়ক রঞ্জিত নায়েক রঞ্জু দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রঞ্জিত বলেন, 'মজুরি পরিশোধে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, কেউ আমাদের কথা রাখেনি। আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু এর একটিও পূরণ হয়নি। তাই দাবি আদায়ে আমরা আগামী রোববার মালনীছড়ায় সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করব।'

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেটের কালাগুল চা-বাগানে শ্রমিকের কাজ করছেন জসোদা বাউরি। তিনি জানালেন, শুরুতে তার দৈনিক মজুরি ছিল ছয় টাকা। সময়ের সঙ্গে তার মজুরি ও রেশনের পরিমাণ একটু একটু করে বেড়েছে। কিন্তু এই লম্বা সময়ে কখনো টানা ২০ সপ্তাহ মজুরি না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।

জসোদা বলেন, 'দোল উৎসবের জন্য আমরা কোনো বোনাস পাইনি। প্রতিবাদ করেছিলাম, আশ্বাস পেয়েছিলাম। সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি। গতকাল মে দিবস গেল। আমাদের পাওনা কিন্তু পরিশোধ হলো না।'

কথা হয় বুরজান চা-বাগানের আরেক শ্রমিক জোসনা বেগমের সঙ্গে। ঈদের আগেও বকেয়া মজুরির দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়েছিল তাকে।

জোসনা বলেন, 'গত ঈদেও কিছু কিনতে পারিনি। বাচ্চাদের সামনে দাঁড়াতে পারিনি। সরকার বা মালিকপক্ষ যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায় তাহলে তাই করুক।'

বুরজান চা-কোম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান- বুরজান চা-বাগান, ছড়াগাঙ চা-বাগান ও কালাগুল চা-বাগান। এছাড়া তাদের একটি কারখানাও আছে। তিনটি চা-বাগান ও কারখানা মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে এই তিনটি চা-বাগান ও কারখানার শ্রমিকরা সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন।

মিছিলটি সিলেট নগরের লাক্কাতুরা এলাকা থেকে বন্দরবাজারে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসে। সেখানে দুই ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা জানান শ্রমিকরা।

বিষয়টি নিয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা আমরা ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয় এবং চা বোর্ডের সঙ্গে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেছি।'

বুরজান চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের পাশাপাশি বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেতন পাননি। বকেয়া বেতন ও মজুরি পরিশোধের জন্য কৃষি ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কালাগুল বাগানের শ্রমিকনেতা সোহাগ ছত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'প্রতিবারই আমাদের বলা হয় আজ-কালের মধ্যে বেতন হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয় না। আমরা যখন অনাহারে থাকি তখন বাগান মালিকরা বিদেশ ভ্রমণ করেন।'

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা সঞ্জয় কান্তি দাসের ভাষ্য বলেন, 'চা-শ্রমিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আগামী রোববার তারা বকেয়া মজুরি-রেশনের দাবিতে রাজপথে অবস্থান নেবেন। রাজপথ ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্প পথ নেই। প্রাপ্য মজুরি-রেশন আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা রাজপথেই থাকবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago