মেঘনায় আবারও মরে ভেসে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দশানি এলাকায় মেঘনা নদীতে মরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ | ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে দশানি পর্যন্ত মেঘনা নদীর প্রায় আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরে ভেসে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

আজ শুক্রবার ভোর থেকে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। বেলা গড়াতে শুরু করলে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ।

হঠাৎ জাটকা ইলিশ এবং চেউয়া, বেলে, টেংরা, পুঁটি ও চাপিলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ও বড় মাছ মারা যাওয়ায় শঙ্কিত জেলেরা। তাদের ভাষ্য, এভাবে মাছ মারা গেলে মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ তো পাওয়া যাবেই না, অন্য মাছেরও সংকট দেখা দিতে পারে।

ষাটনল এলাকার জেলে পলাশ বর্মন বলেন, 'এই নদীই আমাদের জীবন কিন্তু এখন এই নদীতে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে।'

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে ভাসছে মরা জাটকা ইলিশ | ছবি: সংগৃহীত

'কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে, কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছ শূন্য হয়ে পড়বে মেঘনা,' আশঙ্কা পলাশের।

এদিকে গৃহস্থালি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছে না তীরবর্তী বাসিন্দারা। দশানি এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম বলেন, 'বাচ্চারা নদীতে গোসল করে। এখন তো মনে হচ্ছে, পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে! ঘরের কাজে আমরা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছি না।'

দশানি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আজকে যা দেখলাম, তাতে আগামী কয়েক মাস নদী থেকে মাছ পাওয়া কঠিন হবে। বাজারে মাছের দাম বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগী হবে।'

মেঘনা নদীতে ভাসছে মরা মাছ | ছবি: সংগৃহীত

পাশ্ববর্তী কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শামসুদ্দিন বলেন, 'এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। মাছ মরার ঘটনা শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, মানুষের জীবিকার ওপর সরাসরি আঘাত!'

তিনি আরও বলেন, 'আমি বিষয়টি উপজেলা পরিষদে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাবো। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো, এটাই এখন সবার মূল দাবি হওয়া উচিৎ।'

মতলব উত্তর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, 'এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি একটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। এটি প্রথম নয়, শীতলক্ষ্যা থেকে আসা দূষিত পানিপ্রবাহ একাধিকবার এই এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের মার্চে ও গত বছরের আগস্ট মাসেও মাছের গণমৃত্যু হয়েছিল। তবে এবার পরিমাণ আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।'

আন্তঃজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং নদী দূষণকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠন 'মতলবের মাটি ও মানুষ' এর সভাপতি শামীম খান।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'মেঘনা নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গত ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।'

'কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি, পিএইচ ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এর আগে একই রকম বিপর্যয় হয়েছিল। সে সময় নদীর তলদেশে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালের অস্থিত্ব পাওয়া গিয়েছিল,' বলেন তিনি।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, 'নতুন করে আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt forms 5-member body to probe last 3 polls

Former High Court justice Shamim Hasnain has been made the chairman of the committee

5m ago