যমুনার ভাঙনে বিলীনের পথে ইসলামপুরের ৪ গ্রাম

'নদীর গর্জনে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি ভিটে নদীতে। প্রতিবেশীরা চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘরটা চলে যায় যমুনায় ভাঙনে।'
কথাগুলো বলছিলেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের কাশারীডোবা গ্রামের বাসিন্দা বানেছা বেওয়া।
তার প্রতিবেশী মান্না ফারাজীও ভাঙনে সব হারিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সব কিছু চোখের সামনে হারিয়ে গেল। আমার আর কিছুই রইল না!'
সম্প্রতি এই ইউনিয়নের চারটি গ্রামে যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে অন্তত ৫০০ পরিবার। ঈদুল আজহার আর মাত্র একদিন বাকি, এ সময় টিনশেড ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ব্যস্ত শতাধিক মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, প্রতি বছর ভাঙন হলেও এবার যমুনা 'হিংস্র' হয়ে উঠেছে।
বর্ষার শুরুতেই সাপধরী ইউনিয়নের চারটি গ্রাম—বিশ রশি, কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া ও মণ্ডলপাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে। যমুনার দুটি শাখা নদীতে চলছে তীব্র ভাঙন। নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও আবাদি জমি।
সাপধরী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, শিলদহ ও সিন্দুরতলী নামে যমুনার দুটি শাখা নদী এই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গিয়ে আবার মূল নদীতে মিলেছে। এই শাখা নদীগুলোর দুপাড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙন।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ রশি, কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া ও মণ্ডলপাড়া গ্রাম।

স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'নদী ভাঙন এখন আমাদের জীবনযাত্রার স্থায়ী যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর শতাধিক বিঘা জমি ও বসতভিটা যমুনার পেটে চলে যায়। এবারও তিন-চারটি গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।'
চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, আশির দশকের শুরুর দিকে যমুনার বাম তীরের প্রজাপতি, চরশিশুয়া ও চেঙ্গানিয়া এলাকায় প্রথম বড় ধরনের ভাঙন শুরু হয়। এরপর একে একে অনেক গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ২০০১ সালের পর কিছু চর নতুন করে জেগে উঠলে মানুষ সেখানে আবার বসতি গড়ে তোলে। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা আবারও বেড়েছে।
সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম মণ্ডল বলেন, 'বিশ রশি গ্রামের অধিকাংশ ভূমি আগেই ভাঙনে চলে গেছে। এবারও যদি জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ দেওয়া না হয়, তাহলে চারটি গ্রামই চিরতরে হারিয়ে যাবে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান মোবাইল ফোনে বলেন, 'আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন মিললে দ্রুত কাজ শুরু করব।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছি। তাদের তালিকা করা হচ্ছে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হবে।'
বৃহস্পতিবার নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন, জানান হাছিনা বেগম।
Comments