ভবঘুরে বৃদ্ধকে গোসল করাতে গিয়ে মিলল সাড়ে ৩ লাখ টাকা

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক ভবঘুরে সত্তোরোর্ধ্ব বৃদ্ধকে পরিচ্ছন্ন করার সময় তার কাছে পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এ ঘটনায় এলাকায় আলোচনা তৈরি হওয়ায় স্থানীয় থানা ও সমাজসেবা বিভাগ বিষয়টিতে যুক্ত হয়েছে।

আজ সৈয়দপুর থানা থেকে ওই বৃদ্ধকে রংপুরে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সমাজসেবা দপ্তর উদ্ধার করা টাকা জমা রাখবে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হওয়ার পর সেই টাকা দিয়ে তাকে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ভবঘুরে এই ব্যক্তির নাম আব্দুল গনি। তিনি বহু বছর ধরে সৈয়দপুর শহরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ান। কখনো ডাস্টবিন ঘাঁটাঘাঁটি করেন, ছেঁড়া কাগজ কুড়ান। ক্ষুধা পেলে কোনো হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বছরের পর বছর গোসল না করার কারণে তার শরীরে পুরু ময়লার স্তর জমে যায়। পরনে থাকে পাঁচ-ছয়টি নোংরা জামাকাপড়। কাঁধেও থাকে বেশ কয়েকটি কাপড়ের ময়লা ব্যাগ।

গত শনিবার মানসিক ভারসাম্যহীনদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'হিউম্যানিটি বাংলাদেশ'-এর কিছু সদস্য সৈয়দপুরে আসেন। সংগঠনটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জানান, তারা মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জটা, হাত-পায়ের বড় বড় নখ ইত্যাদি কেটে গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন এবং নতুন কাপড় পরিয়ে স্বজনদের খুঁজে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

শনিবার তারা তিন জন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। বিকেলের দিকে রেলওয়ে মাঠের এক কোণ থেকে অসুস্থ আব্দুল গনিকে খুঁজে পান। তবে তিনি কিছুতেই পরিচ্ছন্ন হতে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন তিনি। স্থানীয়দের দিয়ে বোঝানোর পর তার মাথার জটা ও লম্বা নখ কাটার ব্যবস্থা করা হলেও, তিনি তার নোংরা কাপড় পাল্টাতে রাজি হননি।

এক পর্যায়ে তার পরিধেয় বস্ত্র খোলার ব্যবস্থা হয়। জামাকাপড় আর থলেগুলো থেকে বের হতে থাকে টাকা। এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচশ, দুইশ, একশ ও পঞ্চাশ টাকার নোট পাওয়া যায়।

আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক মইনুল ইসলাম জানান, চারপাশে জটলা লেগে গেলে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পরে থানায় গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে টাকা গণনা শুরু হয়।

বেশ কিছু টাকা ঘাম আর ময়লায় দলা পাকিয়ে যাওয়ায় সেগুলো ধীরে ধীরে খুলে গণনা করতে চার ঘণ্টা সময় লাগে।

নিরাপত্তার কারণে সেদিন থেকে তাকে থানা কম্পাউন্ডেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, তিনি বৃদ্ধের কাছ থেকে পাওয়া টাকা ট্রেজারিতে জমা করবেন। তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ চলছে। সেটি হলে তাকে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে, যাতে লভ্যাংশ দিয়ে তিনি চলতে পারেন।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফইমউদ্দীন বলেন, 'ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের আলমনগর এলাকার রবার্টসনগঞ্জে। সেখান থেকে তার আত্মীয়-স্বজন আসায় আজ সকালে আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।'

Comments