বিগত ৩ নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের সরিয়ে রাখার চিন্তা

বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কি না—তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানিয়েছেন।
এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী।
প্রেস সচিব ও উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ওই বৈঠকের আলোচনা ও নির্দেশনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের বাদ দেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, 'উনি (প্রধান উপদেষ্টা) খতিয়ে দেখতে বলেছেন, কাকে কাকে...এবং যতটা সম্ভব, এই বিতর্কিত যারা লোকজন, আপনারা জানেন, ওই সময় অনেক কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে সহযাগিতা করেছেন। যতটা সম্ভব এদের সরিয়ে ইলেকশনটা যাতে করা যায়।'
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ত্রয়োদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখন থেকেই কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামোকে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে।'
নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। এর অর্থ হলো নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার সেটা প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।'
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কি না, যদি নতুন নিয়োগ করতে হয় তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। প্রতিদিন ট্রেনিং হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।'
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আগে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছে সেটা ছিল "লোক দেখানো নির্বাচন"। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেজন্য একটা প্রকৃত নির্বাচন কী করে আয়োজন করতে হয় সেটার ট্রেনিং দিতে হবে। কার কী ভূমিকা সেটা পরিষ্কার থাকতে হবে। দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন করতে হবে যাতে অনুশীলন হয়।'
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ইতোমধ্যেই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব ট্রেনিং শেষ করে ফেলার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এর পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের বডি ক্যামেরা রাখার ব্যাপারেও কাজ চলছে।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'প্রশিক্ষণের জন্য ভিডিও প্রস্তুত করে ফেলুন। কোন ঘটনায় কী করতে হবে, এগুলোর বিস্তারিত অডিও-ভিডিও ভিজুয়াল প্রস্তুত করে সবাইকে দিয়ে দেওয়া, যাতে আগে দেখে নিতে পারে। এরপরে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ে যাবে।'
ভোটারদের জন্যও নির্বাচনের নিয়ম বর্ণনা করে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'টেলিভিশনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওগুলো প্রচার করতে হবে। জরুরি নম্বরগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কোনো ভোটারের অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতে পারে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ভোটার যেন সরাসরি কানেক্ট থাকতে পারে।'
নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষভাবে জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'অর্ধেক ভোটার নারী। কেউ যেন ভোটের অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করতে না পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত নারী সদস্য ও কর্মকর্তা মোতায়েন থাকতে হবে।'
যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, '১৬ বছর মানুষ কোনো ভোট দেখে নাই। ভোটারের স্মৃতিতে আছে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোটচুরি। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে। প্রথম ভোট যারা দেবে এটা তাদের জন্য গৌরবের। সে যেন ভালো অনুভব করে।'
Comments