কোনো শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে না মালিকপক্ষ: শ্রম উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকার শ্রম আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, 'ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি আমরা অত্যন্ত শিথিল করেছি, কোনো শ্রমিককে কোনো মালিক কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটা করতে গেলে মন্ত্রণালয়ের কাছেই আমরা ক্ষমতাটা রাখতে চাচ্ছি।'
'জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫' উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকার সাভারের গেন্ডা এলাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত 'শহীদদের স্মরণে শ্রমিক সমাবেশে' প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
সাখাওয়াত বলেন, 'শুধু কলকারখানাই নয়, যেখানে পাঁচজনের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন, প্রত্যেককেই আমি এই আইনের আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি এবং সেভাবেই কাজ হচ্ছে।'
'বাংলাদেশে বহু বড় বড় ক্লাব আছে, যেসব ক্লাবে শ্রমিকরা আছে, সেসব ক্লাবে শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ারটা দেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজকেই আমি নির্দেশ দিয়েছি এবং এটি নির্দেশ আকারে প্রত্যেকটি সামাজিক ক্লাবের কাছে যাবে,' বলেন তিনি।
দেশের সব শ্রমিকের অধিকার আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমি শুধু মুখে বলে গেলাম—তেমন নয়, তাদের লভ্যাংশের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে আমাদের তহবিলে জমা দিতে হবে।'
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, 'গত আট মাসে বহু ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। এমনকি কিছু দিন আগে একটি নৌ দুর্ঘটনায় সাত শ্রমিককে নগদ সাত লাখ টাকা দিয়েছি।'
অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকবান্ধব উল্লেখ করে শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা কখনো রাস্তায় নামতে পারেননি, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, এমনকি লাঠিপেটা হয়েছে। আমি শুনিনি যে কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সবাই মালিকের পক্ষে কাজ করেছে। আমি মালিকের পক্ষেও কাজ করতে চাই, শ্রমিকের পক্ষেও কাজ করতে চাই এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের দরজা সব সময় খোলা।'
অযৌক্তিক দাবি নিয়ে মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য শ্রমিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাখাওয়াত আরও বলেন, 'আমি বহুদিন থেকে বলেছি, যখন এ রকম পরিস্থিতি হয়, তখন শুধু সরকারের পতন হয় না, পুরো সোসাইটির পতন হয়। তাদেরকে তুলে ধরতে সময় লাগে। আমি যখন এই মন্ত্রণালয়ে আসি, আজ থেকে আট-নয় মাস আগে, প্রচণ্ড শ্রমিক অসন্তোষ ছিল বিভিন্ন কারণে এবং আমি তখন বলেছিলাম, এই শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আমি শ্রমিকদের পক্ষে।'
'আমিও একজন শ্রমিক ছিলাম, আছি এবং তাদের জন্য যতটুকু করা প্রয়োজন, ততটুকু আমি করব। গত আট মাসে তার প্রমাণ আমি রাখার চেষ্টা করেছি। শুধু শ্রমিক নয়, শ্রমিক মালিক, শ্রমিক নেতা—সবার সঙ্গেই আমি কাজ করেছি। অনেক শ্রমিক-মালিক ছিলেন, কারখানা মালিক ছিলেন, বিশেষ করে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে যারা একটু দুষ্ট চক্রের মতো কাজ করেছেন অতীতে, তাদেরকে নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
সমাবেশ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যেমন বেক্সিমকো, বেক্সিমকোকে পরিচালনা করার জন্য বিদেশি কিছু সংস্থা এখন বাংলাদেশে আছে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে হয়তো তারা ফ্যাক্টরিটা পরিচালনা করবে।
শ্রমিকদের বেকারত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা বেকার হয়ে গেছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, কোনো শ্রমিককে বেকার করা আমার কাজ না। আজকে যদি একটা শ্রমিক কাজ না পায়...তার ওপর তার পরিবারও নির্ভরশীল। কাজেই আমরা চেষ্টা করছি, তারা যেন কোনোভাবেই বেকার না হয়।
'আপনারা জানেন, এ দেশে অনেক মালিক আছে যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে গিয়ে মাসের পর মাস বিদেশে থাকছে। এই কারখানা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তারা চলে গেছে। শ্রমিকদের কথা চিন্তাও করেনি,' যোগ করেন সাখাওয়াত।
তিনি আরও বলেন, 'একটা ব্যাংক থেকে যদি ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই ইন্ডাস্ট্রি চলবে কীভাবে? যে ব্যাংককেই ধরি, মিনিমাম এক হাজার কোটি টাকার নিচে কারও দেনা নাই। এখন ব্যাংক আর টাকা দিতে চাচ্ছে না। কাজেই জায়গা-জমি বিক্রি করে আমরা চেষ্টা করছি টাকার যোগান দিতে।'
'আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। অনেকের জায়গা-জমি বিক্রি করার মতো অবস্থা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করার জন্য আমি আবেদন জানিয়েছি। কাজেই যতটুকু করার সামর্থ্য আছে ততটুকু করছি।'
Comments