গঙ্গাচড়ার ঘটনায় রাষ্ট্রের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই: আসক

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নে সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে পরিকল্পিত হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি বলেছে, 'কেবল একটি কিশোরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যেভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তা কোনো সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয়।'
'এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ এবং সংবিধানে দেওয়া সব নাগরিকের সমান অধিকারের পরিপন্থী,' আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আসক।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী—অভিযুক্ত কিশোর স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। পুলিশ তাকে আটক করে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকা সত্ত্বেও, এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে মাইক ব্যবহার করে উসকানিমূলক প্রচার চালানো হয় এবং একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা করে।
'এ হামলায় বহু ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয় এবং সমগ্র এলাকায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের ভাষ্য মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'
আসকের পর্যবেক্ষণ, 'ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার এই ধারাবাহিকতা আশঙ্কাজনকভাবে ঘটে চলেছে। এমন ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিচারহীনতার এক ভয়াবহ নজির তৈরি করছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থী।'
'বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৪১ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বৈষম্যহীনভাবে সমতা, ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা এবং সুরক্ষা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়। এই ধারাগুলো বারবার লঙ্ঘিত হওয়া অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।'
বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি দাবি জানিয়েছে আসক। সেগুলো হলো—এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; আক্রান্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় উসকানি ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, 'এই ঘটনার দায় এড়ানোর সুযোগ রাষ্ট্রের নেই। যারা অপরাধ করেছে এবং যারা দায়িত্বে থেকেও এই ধরনের হামলার ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, উভয়েরই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হবে মানবাধিকারের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একমাত্র পথ।'
Comments