‘কোনো সরকারই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে চায়নি’

'বাংলাদেশে যতবার যে সরকার এসেছে, কোনো সরকারই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে চায়নি, অধিকার দিতে চায়নি।'

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই আক্ষেপের কথা জানান জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যখন আদিবাসীদের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের অনেকে তখন—চেঁচিয়ে উঠেছে; তারা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন।'

'আদিবাসীদের কথা বলায় প্রধান উপদেষ্টা যেন অপরাধ করে ফেলেছেন। তেমনই আজকে আমরাও আদিবাসী হয়ে যেন অপরাধ করে ফেলেছি,' যোগ করেন তিনি।

ঊষাতন বলেন, 'বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে যতবার, যে সরকার এসেছে, কোনো সরকার আদিবাসীদের অধিকার ও স্বীকৃতি দিতে চায়নি এবং দেয়নি।'

সরকার উদার-পরিচ্ছন্ন মনে এগিয়ে এলে পার্বত্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করে নেওয়া যাবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

এই জেএসএস নেতা আরও বলেন, 'আমরা দেখি সারা দেশে এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা, আর পার্বত্য অঞ্চলে আরেক ধরনের শাসন ব্যবস্থা। যে কারণে আজকে আমাদের চলাফেরার নিরাপত্তার নেই, শিক্ষার অধিকার নেই, এখানে নিপীড়ন-শোষণের করুণ ইতিহাস।'

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী শিশির চাকমা, অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মণি তালুকদারসহ অনেকে।

এর আগে বেলুন উড়িয়ে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

সভা মেষে দুপুরে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে একটি র‍্যালি জেলা শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়।

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়াসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও শিশুরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে র‍্যালিতে অংশ নেন।

খাগড়াছড়িতে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত করা, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ধর্ষণের বিচার ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বম সম্প্রদায়ের লোকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

এবারের প্রতিপাদ্য 'আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্থক প্রয়োগ'।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে এদিন সকালে মহাজনপাড়া সূর্যশিখা ক্লাব থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তরুণ-তরুণীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে খাগড়াপুরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি চাথোয়াই মং মারমা।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী নেতা সুধাকর ত্রিপুরা।

মনোতোষ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুজন চাকমা ঝিমিত, সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ, উদযাপন কমিটির সদস্য জ্ঞান প্রিয় চাকমা, সাধারণ শিক্ষার্থী জনত্তম চাকমা, সাংস্কৃতিক কর্মী কৃপায়ন ত্রিপুরাসহ অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Police: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

2h ago