বাইকের চাকা ঘুরলেও সংসারের চাকা আর ঘোরে না

একসময় বাগেরহাটের মফস্বল এলাকায় মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে পরিবার চালানো যেত স্বচ্ছন্দে। দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। কিন্তু এখন সেই আয় নেমে এসেছে মাত্র ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
কচুয়া উপজেলার চরকাঠি গ্রামের আব্দুল কাদেরের এটাই পেশা। কচুয়ার সাইনবোর্ড বাজারের মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এখন চরম কষ্টে দিন পার করছেন এই চালকেরা।
বলেন, 'কয়েক বছর আগেও চারজনের সংসার স্বচ্ছলভাবে চালাতে পারতাম। এখন রোজগার তেমন নেই। পেট্রোল, মোটরসাইকেল মেরামত, অন্যান্য খরচ বাদ দিলে হাতে তেমন কিছুই থাকে না। অথচ আর কোনো কাজও নেই।'
একই সুর ভেসে আসে উপজেলার আঠারোগাতী গ্রামের রুবেল মোল্লার কণ্ঠে। বলেন, 'পরিবারে ছয়জন সদস্য। কীভাবে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কোনোরকমে ডাল-ভাত খেয়ে দিন কাটছে।'
বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রায়েন্দা, পিরোজপুর ও খুলনার বিভিন্ন এলাকায় একসময় যোগাযোগের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এসব মোটরসাইকেলগুলো। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোভ্যান ও কম ভাড়ার অন্যান্য যানবাহন।
মোটরসাইকেলচালক মহিদুল ইসলাম বলেন, 'আগে মানুষ মোটরসাইকেলে যেত। এখন ২০-৫০ টাকায় ইজিবাইকে উঠে পড়ে। বর্ষাকালে তো আরও বিপদ। বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে কেউ মোটরসাইকেলে উঠতে চায় না।'
তিনি জানান, 'সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে একসময় প্রায় ১০০ চালক ছিল, এখন নেমে এসেছে ৩৫-৪০ জনে। জেলার প্রায় ৪০০ জন চালক এখনো কোনো রকমে পেশায় টিকে আছেন।'
'এখন নিয়মিত কিছু চাকরিজীবী ছাড়া আর কেউ মোটরসাইকেলে ওঠে না,' তিনি আক্ষেপ করে বলেন।
প্রচণ্ড কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও এসব চালক যাত্রী পরিবহন করে যান, দিনে কয়েকশ টাকা আয়ের আশায়। মোটরসাইকেলই তাদের জীবিকার অবলম্বন। কিন্তু সামনে পথ যেন ক্রমেই আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
Comments