‘রাজনৈতিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার ইচ্ছা সরকারের নেই, দিচ্ছিও না’
রাজনৈতিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার কোনো রকম ইচ্ছা সরকারের নেই এবং বাধা দেওয়া হচ্ছেও না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করবে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে তারা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করে, রাস্তা-ঘাট আটকে দেয় তাহলে তো আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তারা পালন করবে, এটিই স্বাভাবিক। সব দেশেই এ রকম হচ্ছে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে যদি পরিচালনা করে সরকারের বাধা দেওয়ার কোনো রকম ইচ্ছা নেই। আমরা বাধা দিচ্ছিও না। এটাও আপনারা দেখেছেন, কোনো এক দলের নেতারা বলছেন, আপনারা আসবেন, লাঠিটা নিয়ে আসবেন। লাঠিটা নেওয়ার সময় দেশের পতাকা বেঁধে নেবেন তাহলে আপনাদের কেউ কিছু বলতে পারবে না। উদ্দেশ্যটা কী? দেখলাম, পুলিশকে লাঠিপেটা শুরু করে দিচ্ছে। মিরপুরে একটি পুলিশ সার্জেন্টকে পেটানোর দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। এ রকম হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেই!
তিনি আরও বলেন, যখনই ভাঙচুর হয়, মামলা হবেই। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চুরি গেলেই তো সঙ্গে সঙ্গে একটা মামলা হয়! কাজে ভাঙচুর হলে মামলা হবে না, এটা তো হতে পারে না! কাল একজন বিচারপতির গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি মামলা করেছেন। কাজে এ মামলা তো হবেই! এখানে রাজনীতির গন্ধ আনা উচিত না। আমরা যেটা বলছি, বিক্ষোভ প্রকাশ করতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তারা যদি ভাঙচুর করেন, জনদুর্ভোগ তৈরি করেন তাহলে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুরনো মামলা তো রয়ে গেছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। অনেক মামলা ছিল, এগুলো নিষ্পত্তি করতে আমরা সব সময় কাজ করছি। পুরনো-নতুন বলে কথা নয়, যে মামলাগুলো সামনে চলে এসেছে, প্রমাণ পাওয়া গেছে, হয় আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরডি) বা অভিযোগপত্র দিচ্ছি। এই পুরনো মামলা আমরা আর কত যুগ ধরে রাখবো! সেটা পুলিশের দায়িত্ব, পুলিশ পালন করছে। নতুন করে কিছু হচ্ছে না।
আমরা পরিবহন মালিকদের সব সময় বলে থাকি, আপনারা আপনাদের গাড়িগুলো চালু রাখেন। ২০১৩ সালে আপনারা দেখেছেন অগ্নিসন্ত্রাস, ৯২ দিন তারা আগুন জ্বালিয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তখনো আমরা চালু রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা যে কোনো মূল্যে যাতে করে চালু থাকে সে ব্যবস্থাটা করেছি, এবারও ট্রান্সপোর্ট মালিকদের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি তারা যাতে চালু রাখে, প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদক আমরা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও সব সময় মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা শূন্য সহিষ্ণু নীতি পালন করে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদের কারাগারগুলোতে ৪১ হাজারের বেশি আসামির ধারণ ক্ষমতা আছে। সেখানে কোনো কোনো সময় ৯০ হাজারের বেশি আসামি হয়ে যায়। ৮০ হাজারের নিচে কখনো এই সংখ্যা নামে না। এর কারণ হলো, প্রায় ৬০ শতাংশ হলো মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগপোযোগী করতে আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি এবং সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান আমরা সংসদ থেকে করে নিয়ে এসেছি। আমরা বলতে পারবো না শূন্য সহিষ্ণু নীতি আমরা যথাযথাভাবে পালন করতে পারছি, এখানে সবার সহযোগিতা লাগবে।
মাদক আমরা তৈরি করি না। বাইরে থেকে আমাদের দেশে মাদক আসে। সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক মিয়ানমার থেকে আসে। ভারত থেকে আসতো, এখনো আসে। ফেনসিডিল এবং অন্যান্য মাদকও আসে। আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে এটা মোটামুটি...ফেনসিডিল-কোকেন অন্যান্য মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। মিয়ানমার কথা বলে অনেক, একমত হয় অনেক কিছু কিন্তু কিছুই করে না। সেই জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা মাধ্যমে আমরা শতভাগ সফল হতে পারছি না। বিজিবিকে আমরা শক্তিশালী করছি। আমাদের মোট ৪ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার সীমান্ত পথ, ৯৪ শতাংশই ভারতের সঙ্গে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু কিছু জায়গা রয়েছে যেটা ভীষণ দুর্গম। একটি বিওপি থেকে আরেকটি বিওপিতে যেতে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো পথ নেই। একটি বিওপি থেকে আরেকটি বিওপিতে যেতে দুদিন লেগে যায় এমনও আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হয়। বিজিবিকে আমরা হেলিকপ্টার কিনে দিয়েছি, বলেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় মনে করে নির্বাচনের মাধ্যমে, পাবলিক ম্যানডেটের মাধ্যমে সরকার বদল হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অনেক কিছুই দেখেছি। ষড়যন্ত্র-মিলিটারি ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদল করতে হবে জনগণের ম্যানডেট নিয়ে। সংবিধান অনুযায়ী, ৫ বছর পর পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে যায় কিংবা নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। নির্বাচনের সময় এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ২০২১-এ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পন করবেন। বাংলাদেশকে সেই দেশে নিয়ে যাবেন। কোভিডের জন্য আমরা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে আছি। কিন্তু আমরা যদি চোখ করে একটু দেখি, আমরা কোন জায়গায় এসেছি তাহলে নিশ্চয়ই অনুমান করতে, আশ্বস্ত হতে পারবো। দেখতে পাব যে, আমরা কোথায় থেকে কোথায় এসেছি।
এই যে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ, দুঃসাহসিকভাবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সব কাজ করে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমি অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা হয়েছিল, টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই শান্তির প্রয়োজন হয়। সেখানে আমি বলেছিলাম, টেকসই শান্তি থাকতে হলে টেকসই নিরাপত্তার দরকার হয়। আমরা এই সবগুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। সে জন্য আমাদের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। নিরাপত্তার প্রয়োজনে আমরা পুলিশ বাহিনীর নতুন নতুন শাখা খুলছি। আমরা বিজিবি-কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করছি। আনসারের সংখ্যা বাড়াচ্ছি, বলেন তিনি।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অপরাধ দমনে নানা সফলতার কথা তুলে ধরেন।
Comments