‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, বিষয়টি এমন না’

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। দলের প্রধান কে হবেন, এ নিয়ে বেগম রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়। তাদের দুজনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে রওশন এরশাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।
 ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, বিষয়টি এমন না’
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। দলের প্রধান কে হবেন, এ নিয়ে বেগম রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়। তাদের দুজনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে রওশন এরশাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।

জাপার সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা করা হয়েছে। দলটির সাবেক এক নেতার মামলায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত ৩০ অক্টোবর থেকে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দলটি কে চালাচ্ছেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন, এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা আছে। আলোচনায় আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টি পরিচালনা করে থাকেন।

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেগম রওশন এরশাদ, জি এম কাদের এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ বৈঠক করেন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ, জি এম কাদের ও রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ। ছবি: বাসস

জাতীয় পার্টির চলমান সংকট বিষয়ে জি এম কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটি স্বাভাবিক। এই দ্বন্দ্ব সব দলেই থাকে। তবে আমাদেরটা একটু বাড়িয়ে বলা হয়। অনেক সময় সংকটের সৃষ্টি করা হয়, টানাপোড়েন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। কারণ আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। আমি এটি স্বাভাবিক মনে করি। যে টানাপোড়েন আছে, সেটা তেমন কিছু না।'

আলোচনা আছে যে, জাতীয় পার্টি পরিচালিত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এই আলোচনা আরও জোরদার হলো কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, বিষয়টি এমন না। তার সঙ্গে আমাদের সখ্যতা অনেক আগে থেকেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির শুভাকাঙ্ক্ষী। সেই হিসেবে অনেক সময় কিছু কথা বলেন। সেগুলো আমরা মানতে পারি, নাও পারি। আমাদের দল ভালো থাকুক, আমরা ভালো থাকি, এটা তো স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক কথা।'

গতকালের সাক্ষাৎকার বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আমাদের ডেকেছিলেন। ভাবি (রওশন এরশাদ) গিয়েছিলেন। সেখানে আমিও ছিলাম। জানি না এটা নিয়ে কে কী ভাবছে।'

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দলের মধ্যে কোনো সংকট নেই। আমাদের দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে পারিবারিক কিছু মনোমালিন্য আছে, মান-অভিমান আছে। তা ছাড়া আমাদের দলের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।'

প্রধানমন্ত্রী নিজে জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, এমন সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'গতকাল প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। জাতীয় পার্টি একটি পূর্ণাঙ্গ দল। আমাদের নিজস্ব সাংগঠনিক কাঠামো আছে, গঠনতন্ত্র আছে, সেই অনুযায়ী দল চলে। অন্য কেউ আমাদের দলকে পরিচালনা করেন, এই ধরনের বক্তব্য ঠিক না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকটি নির্বাচনে জোট করেছিলাম, তাই মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধারণা হয়তো আছে যে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের মনে হয় একটা সুষ্ঠু সম্পর্ক আছে। আসলে এখন সেটা নেই। এখন আমরা কোনো জোটে নেই। আমরা আলাদা। নির্বাচন উপলক্ষে নিজস্ব লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।'

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো জাপা চায়, এ ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। এই বিষয়টি আসলে কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'প্রশ্নই আসে না। এই ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।'

আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সিদ্ধান্ত আছে, আমরা এককভাবে নির্বাচন করব।'

জাতীয় পার্টির চলমান সংকট বিষয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয় পার্টির মূল নেতা ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব নিয়ে আমরা নানা কোন্দল, দলাদলি দেখতে পাই। এগুলো থাকবে। কারণ পানি ঘোলা হলে মাছ শিকার করতে সুবিধা হয়। জাতীয় পার্টি মুখে কী বলে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। আড়ালে তারা কী করে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পার্টির যে সংকট, এটি বেশি দূর গড়াবে না। নিজেদের মধ্যে মিটমাট করার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের হুকুম দিয়েছেন।'

জাতীয় পার্টি আসলে কে বা কারা চালায়, এ বিষয়ে এই লেখক ও গবেষক বলেন, 'জাতীয় পার্টিকে আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল মনে করে। জাতীয় পার্টিও এই অবস্থানকে মেনে নিয়েছে। জাতীয় পার্টির অনেক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আসে। অনুগত রাখার জন্য জাতীয় পার্টিকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারে থেকেও তারা এক সময় বিরোধী দলে ছিল। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। সেক্ষেত্রে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টিকে একটি বিরোধী দল হিসেবে জনগণকে গেলাতে চায়। কিন্তু সেটি যেন আবার হাতের মুঠোর বাইরে না যায়, সেজন্য নিয়ন্ত্রণটাও রাখে। নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো কৌশল আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো— জাপার একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেটি এখন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে হচ্ছে।'

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্পর্ক বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'সামনে নির্বাচন নিয়ে নানা রকম হিসাব-নিকাশ হবে, সমীকরণ হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে পাশে চায়। জাতীয় পার্টিরও এখানে স্বার্থ আছে। দরকষাকষি করে তারা সংসদে যাতে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে পারে, সেই চেষ্টা তারা করবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

4h ago