‘বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করেছে সরকার’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেখেছি এখনো কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে আছেন। অনেক শীর্ষ নেতারাও জেলে আছেন। কিন্তু কারও মধ্যে হতাশা দেখিনি, সবাই উজ্জীবিত। এমন অবস্থার পরও আমরা কেউ পিছিয়ে নেই। আরও উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যত অত্যাচার আসুক, নির্যাতন-নিপীড়ন আসুক, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করব। সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব।'
'চলমান আন্দোলনে ৩ শহীদ নেতার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা'র জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় নিহত ৩ নেতার পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা আক্তার বর্ষা তার মেয়ে মিথিলা আক্তার মারিয়াকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
মিথিলা আক্তার মারিয়া বলেন, 'আমার স্বামী ভালো মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। তবে জানি এই সরকারের সময় আমার স্বামী হত্যার কোনো বিচার পাব না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে।'
গত ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে নিহত হন বোদা উপজেলা ময়দানদীঘি বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন।
তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল আল মাহিকে দেখিয়ে বলেন, 'এতটুকু ছেলেকে যারা এতিম করেছে এর বিচার চাই।'
গুলিতে নিহত বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভুঁইয়া তানুর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, 'আমার স্বামী আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বর্বরতার শিকার। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলার বাদী আমি নিজেই। তাই ঘর থেকে বের হতেই এখন ভয় পাই। ছেলের শোকে আমার শ্বশুর মারা গেছেন, শাশুড়িও অনেক অসুস্থ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বামীর সুষ্ঠু বিচার যেন আমি পাই।'
এসময় তার সঙ্গে মেয়ে তানজিনা তাশমিও ছিলেন। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ উপস্থিত নেতাদেরও কাঁদতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা একটি আদর্শ ও লক্ষের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। নিজের দেশকে মুক্ত ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা প্রাণ দিয়েছেন। গত ২২ আগস্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করি, তখন থেকে আমাদের ১৫ জন ভাই শহীদ হয়েছেন। তারা পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হয়েছেন। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বীরের মতো শহীদ হয়েছেন। কেউ পেছনে পালাতে গিয়ে নিহত হননি, শহীদ হননি। তারা বুক পেতে দিয়ে চলে গেছেন। তারা দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করে গেছেন, তা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা আরও ত্যাগ শিকারের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন।'
তিনি বলেন, 'যুগে যুগে বড় কিছু অর্জন করতে গেলে এই আত্মত্যাগ করতে হয়। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, তখন লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। তখন অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছিল। আজকেও একটা দানবীয় শক্তি আমাদের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে নেই। এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, দেশের মানুষ যাকে মা বলে ডাকেন, সেই নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর বন্দি করে রেখেছে। যার কথায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন সংগ্রাম শুরু করেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকে সুদূর ৮ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছেন। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিমুহূর্তে তিনি কাজ করছেন।'
এসময় গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার প্রতিটি নেতার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, 'প্রতিটি পরিবারের পাশে বিএনপি সবসময় থাকবে।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, পঞ্চগড় জেলার সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।
Comments