কত ভর্তুকি দেওয়া যায়, কেন দেবো: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আবারও বলবো, গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি ক্রয়মূল্য যা হয় সেটা সবাই দিতে রাজি থাকে। তাছাড়া কত ভর্তুকি দেওয়া যায়! আর এ ক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেবো?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি আবারও বলবো, গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি ক্রয়মূল্য যা হয় সেটা সবাই দিতে রাজি থাকে। তাছাড়া কত ভর্তুকি দেওয়া যায়! আর এ ক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেবো?'

আজ রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত (বিডা) ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো, আমরা পৌঁছে দিয়েছি।'

'বিদ্যুতের জন্য যে হাহাকার...জেনারেটারে যে ট্যাক্স ছিল, সেটা আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র বিদ্যুৎকেন্দ্র, কল-কারখানা; আপনারাও যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেন, ১০ মেগাওয়াট থেকে ৩০ মেগাওয়াট সে ব্যবস্থাও আমি করেছিলাম। শুধু তাই না, আপনারা নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করবেন, আবার অন্যকে দিতে পারবেন। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালোভাবে চলে, বিনিয়োগ আসে সেই চেষ্টাই আমরা করি। তবে আজকে (বিদ্যুৎ) আমরা শতভাগ দিতে পেরেছি,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যে বিদ্যুৎ দেই এটা উৎপাদন করতে ১ কিলোওয়াটে খরচ হয় ১২ টাকা। সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। ইংল্যান্ডে কিন্তু ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু এখনো সে পর্যায়ে যাইনি।'

'আমি আবারও বলবো, গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি ক্রয়মূল্য যা হয় সেটা সবাই দিতে রাজি থাকে। তাছাড়া কত ভর্তুকি দেওয়া যায়! আর এ ক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেবো? ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে। আমরা করোনাভাইরাস যখন মোকাবিলা করি, আমরা বিশেষ প্রণোদনা দেই যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কল-কারখানা চালু থাকে। এই প্রণোদনা দেওয়ার ফলেই কিন্তু আমাদের অর্থনীতির গতিটা সচল থাকে। প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটা মাথায় রাখতে হবে—বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। আজকে সেই অবস্থায় আমাদের চলতে হবে,' বলেন তিনি।

'তারপরও আমাদের গতি থেমে থাকেনি, সে জন্য অবশ্যই আমাদের ব্যবসায়ীদের অবদান আছে,' বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, 'আমরা এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বাধীনতার পরে এটা অনেকে ভাবতেই পারেনি যে বাংলাদেশ এখানে আসতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে, মাত্র ১৪ বছরে কিন্তু আমরা এ অর্জন সম্ভব করেছি।'

মূল্যস্ফীতি অত্যাধিক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদেরকেও সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর মধ্যেও আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা সহজ হয়ে যায়। আজকে কিন্তু গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের উন্নতি হচ্ছে এবং আমাদের দেশীয় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। নিজেদের বাজার আমরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছি।'

বাংলাদেশ পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল আমাদের ওপর। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, প্রমাণ করতে পারেনি। ক্যানাডা ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছিল সমস্ত অভিযোগ ভুয়া-মিথ্যা। আমি বলেছিলাম, আমাদের নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু করবো। আসলে এটা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, কারো কাছ থেকে তখন সমর্থনই পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু আমার সমর্থন আমার জনগণ। জনগণ আমার পাশে, তারা দাঁড়িয়েছিল। আপনারা বিশ্বাস করবেন না, অনেকেই আমাকে চেক পাঠিয়েছে, টাকা পাঠিয়েছে; আপনি পদ্মা সেতু করেন আমরা আছি আপনার সঙ্গে। আমি ভাঙাইনি চেকগুলো, রেখে দিয়েছি। আমি বলেছিলাম, আমরা করবো। ইনশাল্লাহ আমরা করে ফেলেছি। একটি সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে।'

'আমাদের বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে এটাও কিন্তু একটা বিরাট কাজ,' বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমি চাই আমাদের দেশে যুব সমাজ নিজেরাই বিনিয়োগকারী হবে। উদ্যোক্ত গড়ে তোলা। আমরা ফার্স্ট ট্র্যাক অনট্রোপ্রেনারশিপ গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যুব সমাজের জন্য স্টার্টআপ প্রোগ্রাম আমরা করে দিয়েছি। তার জন্য আলাদা বাজেটও আছে। কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে এক ব্যক্তি কোম্পানি করতে পারে সেই ব্যবস্থাটাও নিয়েছি। যাতে করে আমাদের নিজেদের ছেলেপেলেরা উঠে আসবে, কাজ করবে, সেগুলো চাচ্ছি।'

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'নিশ্চয়ই আপনারা এটা স্মরণ করবেন, গত ১৪ বছরে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন। এখন আর হাওয়া ভবনের পাওনা দিতে হয় না। কোনো কিছুই করতে হয় না।'

সবাইকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সবাই বিনিয়োগ করুন। নিজেরাও লাভবান হবেন আবার আমার দেশটাও লাভবান হবে। আমাদের রপ্তানি বাস্কেট বাড়াতে হবে। নতুন নতুন পণ্য ও বাজার বের করতে হবে। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজেই বিদেশি-দেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশ আরও উন্নত হোক, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে।'

Comments