‘এনাফ ইজ এনাফ’

সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও নীল নকশার নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও নীল নকশার নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের অবস্থা তুলে ধরে আজ রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা (সরকার) বেমালুম ধ্বংস করে দিয়েছে। এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে… বেশিরভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধীদল কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। সিলেটে অত্যন্ত জনপ্রিয়, দুই বার মেয়র হয়েছেন আরিফ (আরিফুল হক চৌধুরী) এবং সিলেটের মানুষ তাকে আবারও মেয়র হিসেবে চায়।'

'সেই আরিফ পর্যন্ত কাল জনসভা করে বলেছেন, এই নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, নির্বাচনই হবে না। তারা (সরকার) ব্লু-প্রিন্ট করে ফেলেছে। এই নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না, এটা অর্থহীন হবে। সিলেটের মানুষ চোখের পানি ফেলেছে, কেঁদেছে যে, তাদের প্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না…। তিনি (আরিফুল) পরিষ্কার করে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না', যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সব জায়গায় একই অবস্থা। প্রতিটি নির্বাচনকেই একই অবস্থার দিকে নিয়ে গেছে সরকার। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এটা হচ্ছে- এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী যারা, ফ্যাসিবাদী যারা তাদের একটা হাতিয়ার। নির্বাচন একটা টুল, দেখাবে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন কথা বলবে, নির্বাচন কমিশনের কমিশনাররা কথা বলবেন। নির্বাচন হচ্ছে দেখানোর চেষ্টা করবে কিন্তু তারা পুরো নির্বাচনকে তাদের মতো করে নিয়ে যাবে।'
     
'এই কারণে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। হাসিনা সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে, তাদের (ক্ষমতাসীন জোট) যে জোট আছে ১৪ দল, ১৪ দলের এক শরিক দলের মন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। তিনি কিছুদিন আগে বলেছেন, পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে, সেই নির্বাচন তিনি (মেনন) চান না।'

'আরেকজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এখানে মন্ত্রীরাই সিন্ডিকেট তৈরি করে, তারাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এসব আমার কথা নয়, তারা (সরকারের মন্ত্রীরা) বলছেন', বলেন তিনি।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'পত্রিকায় এসেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলছে, বাংলাদেশ ইজ চ্যাম্পিয়ন অব ডিফল্ট লোনস। এই যে খেলাপি ঋণ, এতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। এক শ্রীলঙ্কা ছিল, এখন শ্রীলঙ্কা থেকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।'

'খেলাপি ঋণ নিয়ে কেন কথা হবে না? যারা ঋণ নেয় শোধ করে না, তাদের অ্যাডভাইজার তো মন্ত্রী, আমি নাম বলব না। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা ঋণ নিয়ে রি-শিডিউল করছেন বছরের পর বছর ধরে। আর ছোটখাটো ব্যবসায়ী যদি ডিফল্ট হয়, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাচ্ছে, তাকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই সরকারের অপকর্ম বলে শেষ করা যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ। এই সরকার যদি একটা মুহূর্ত আর দেশের পরিচালনায় থাকে, দেশ আরও খারাপের দিকে যাবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে কমিটমেন্টগুলো করেছিল, প্রতিটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দল, আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দল, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধী দল।'

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহ উদ্দিন এবং হুমায়ুন কবীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments