নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ডেড’ নয়, এখন ‘লাইভ’ ইস্যু: মির্জা ফখরুল

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার 'ডেড' নয়, এখন 'লাইভ' ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার 'ডেড' নয়, এখন 'লাইভ' ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডেড ইস্যু' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
 
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশকে এই সরকার চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে কারণে আমরা বার বার করে বলছি, এই সরকারের এখন থাকার আর কোনো কারণ নেই। তারপরও তার নেতা, তার মন্ত্রীরা বলছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেড ইস্যু।'
 
'ডেড ইস্যু হবে কেন? এটাই তো এখন সবচেয়ে লাইভ ইস্যু। কারণ আমরা মনে করি যে, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। এত চুরি করেছে, এত দুর্নীতি করেছে এবং একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কারণ নেই। সে কারণে আমরা বলেছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা একটা নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্দলীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে', যোগ করেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের যে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, আমদের যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, এটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। কারণ তারা জানে, তারা এত চুরি-চামারি করেছে যে, সাধারণভাবে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে কোনোদিনই তারা ক্ষমতায় ফিরে আসা তো দূরে থাকুক, পার্লামেন্টে ১০ ভাগের বেশি ভোট পাবে না। সেই সরকার আজকে ক্ষমতায় বসে আছে।'
 
'আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের মানুষ দুটি ইলেকশন দেখেছে… ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। আবার ওই জায়গায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এখানে দাদা (সুব্রত চৌধুরী) আছেন। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকেছিলেন সংলাপের জন্য। আমরা গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা অবস্থা তৈরি হয়, সেই অবস্থায় আমরা যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারি, তাহলে হয়তো জনগণের সেই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারব', বলেন তিনি।
 
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
 
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, 'আইনমন্ত্রী পার্লামেন্টে কালকে বলেছেন, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে যে, তখন আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা কাউকে আটক করা যাবে না। এই কথা কে বিশ্বাস করবে? সেই রাখাল বালকের গল্পের মতো। সেই রাখাল বালক গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য যখন প্রায় চিৎকার করতো বাঘ আসছে বাঘ আসছে বলে, গ্রামবাসী তখন লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসতো। এসে দেখতো যে, কিছু নেই সেই রাখাল বালক দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে।'
 
'থার্ড টাইম যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছে, রাখাল বালক চিৎকার শুরু করেছে তখন দেখে গ্রামবাসী কেউ আসেনি। আমরা তো দুইবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। থার্ড টাইম এ দেশের মানুষ আর প্রতারণার শিকার হবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এই সমস্ত কথায় কেউ ভুলবে না। কারণ কখনই তোমরা প্রমিজ রক্ষা করনি', বলেন তিনি।
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। আগে পদত্যাগ করুন, তারপর সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন একটা নির্দলীয় সরকার গঠন করার জন্য ব্যবস্থা নিন। নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।'
 
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রয়াত গৌতম চক্রবর্তীর সম্পৃক্ততা দেখে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের চলমান আন্দোলনে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
 
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার ও মহাসচিব তরুণ কুমার দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায়, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত এবং প্রয়াত নেতার ছেলে গৌরব চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
 
অনুষ্ঠান গৌতম চক্রবর্তীর সহধর্মিণী ও ফ্রন্টের উপদেষ্টা দিপালী সাহা চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন।

Comments