পাড়া মহল্লা গ্রাম ওয়ার্ড ইউনিটে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, তারা সেটি আবার প্রমাণ করেছে। গত শুক্রবারের প্রোগ্রামে গণ্ডগোল কেন হলো না, সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।'
তিনি বলেন, 'গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট অর্থাৎ অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। তারেক জিয়া নিজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দিচ্ছেন, গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার জন্য এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করার জন্য। সেই প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।'
আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংসতার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো আবারও পেট্রোল বোমা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে, অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য শুরু করেছে।'
'আপনারা দেখেছেন, বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তিনি আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। আবার বলছেন, এটা একটু ভিডিও করে রাখেন, জায়গা মতো পাঠাতে হবে। অর্থাৎ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠাতে হবে', যোগ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা জানেন, গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করেছে। একইসঙ্গে আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ যৌথভাবে বিশাল সমাবেশ করেছে। মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরত্বে ২টি বিশাল সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু ঢাকা শহরে বিন্দুমাত্র কোনো গণ্ডগোল হয়নি। কারণ, আমাদের দলের নেতাকর্মী এবং প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল।'
তিনি বলেন, 'গণ্ডগোল কেন হলো না, সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর বেজায় চটেছেন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন শনিবার ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এই রাজপথ মানুষের, ঢাকা শহরের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে পারে এবং করছেও তারা। সেখানে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং সহযোগিতা করা হয়েছে।'
তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত শুক্রবার তাদের সমাবেশের জন্য সব সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা যেখানে চেয়েছে, সেখানেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখ বন্ধ করে নগরবাসীকে নগর থেকে বের হওয়া আর নগরে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার কাউকে সরকার দিতে পারে না। সে কারণে সেটি সরকার অনুমতি দেয়নি।'
তিনি বলেন, 'যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে কষ্ট দেওয়ার অপপ্রয়াস চালায়, তারা সেন সেটি করতে না পারে, জনগণের পাশে থাকা সরকারি দল হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। কেউ যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি বিনষ্ট করতে না পারে, সেজন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঢাকার প্রবেশ মুখে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। আমাদের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর তারা আক্রমণ চালিয়েছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছে, ঠিক একই ভাবে তারা ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ, জনগণ ও বাসের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।'
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, 'বিএনপি শনিবার প্রথমার্ধে ৭টি বাস জ্বালিয়েছে, রাতের বেলা আরও গাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেক কষ্টে গাড়িগুলো কিনেছে মানুষ। এই গাড়ি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, একটি পরিবারের স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তারা যে আগুন দিয়েছেন সেটি অস্বীকার করলেন। তার মতো জঘন্য মিথ্যাবাদী বাংলাদেশের কখনো জন্মগ্রহণ করেনি। মিথ্যা বলায় যদি কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে তিনিই হবেন। এরকম জঘন্য মিথ্যাচারী রাজনীতিবিদ কখনো বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেনি। যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খোঁচা দিলে জ্বলে ওঠে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'আমাদের নেতাকর্মীরা আঘাত করলে প্রতিঘাত করার জন্য একসঙ্গে নেমে পড়ে। তারা দেশের বেদিমূলে আঘাত হেনেছে, আবার জনগণের ওপর হামলা পরিচালনা করছে। তাদেরকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমরা জানি। বিএনপির নেতারা ঘাপটি মেরে আছে, সেখান থেকে বের হয়ে এখন হামলা পরিচালনা করছে। সুতরাং এই হামলাকারীদের পাড়ায়-মহল্লায় গ্রামে-গঞ্জে প্রতিহত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে, তারা আমাদের দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। আমাদের দেশের জমি-সাগরের অংশ বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। একাত্তরেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সব ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন যারা আমাদের দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। আমরা জীবন দিয়ে হলেও দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে পারি না।'
নেতাকর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। আমরা আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে না আনা পর্যন্ত রাজপথে নেমেছি, রাজপথেই থাকবো। আগুন সন্ত্রাসীদের আমরা এই দেশ থেকে বিতাড়িত করব। বিএনপি নির্বাচন চায় না, তারা চায় দেশে একটি গণ্ডগোল পাকাতে। ওরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ভণ্ডুল করতে চায়, সেটি আমরা হতে দিতে পারি না। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাবো, ঐক্যবদ্ধভাবে পাড়া-মহল্লা, গ্রামে-গঞ্জে, ওয়ার্ড-ইউনিটে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের এই অপরাজনীতি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই।'
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্ব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তরজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম, ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।
Comments