নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য জনমতের প্রতিফলন: বিএনপি

নির্বাচন নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি
আজ সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান জিয়াউর রহমানে কবরে পুস্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বক্তব্য 'জনমতের প্রতিফলন' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

'টিআইবি বিএনপির দালালি করছে' সরকারের মন্ত্রীদের এমন প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'কে বলে নাই যে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে…সবাই তো বলেছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই। কাজেই টিআইবি যা বলেছে, এটা জনমতের প্রতিফলন।'

'আমরা (বিএনপি) যা বলেছি সেটাও জনমতের প্রতিফলন। ফলে যদি আমাদের কথা মিলে যায়…সেটা একজন আরেকজনকে পছন্দ করার জন্য না, এটা সত্য বলার জন্য', বলেন তিনি।

একই কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, 'শুধু টিআইবি কেন, কে বলে নাই সেটা বলেন? কে বিএনপির কথাকে রিপিট করে প্রমাণ করে নাই যে, বিএনপি বিগত ১৫ বছর ধরে এই সরকারের স্বৈরাচারী প্রকৃতি এবং একদলীয় শাসন সম্পর্কে যে কথা বলেছে…এটা দেশে-বিদেশে কোন প্রতিষ্ঠান, কোন সরকার বলে নাই যে, বিএনপি সত্য কথা বলে নাই।'

নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অভিমতকে সাধুবাদ জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'ন্যায্য কথা, বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষে যে বলবে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা যা বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ, জনগণ যা বলে সেটা ‍গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বলেন, 'জনগণ এই সরকারের স্বৈরশাসন পছন্দ করে না। এই সরকার যে অন্যায়ভাবে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করে রেখেছে…দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে…আমরা এর নিন্দা জানাই। যারা এসব অন্যায়-অনাচার-জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং ভোট চুরির সমালোচনা করে, তাদের সবাইকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।'

শিগগির দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা হবে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, 'শহীদ জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই গণতন্ত্রকে আবার মেরে ফেলা হয়েছে। সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করার যে লড়াই এই লড়াই চলছে এবং এই লড়াইয়ের যে বিভিন্ন কর্মসূচি আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর যে কর্মসূচি সেটাও আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।'

'শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার, যত দ্রুত সম্ভব লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের সহায়তায় আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা করব,' বলেন তিনি।

আবদুল মঈন খান বলেন, 'বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগের মতো। আমরা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং আমরা আমাদের যে কর্মসূচি চলমান রয়েছে এবং এই চলমান কর্মসূচি আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অব্যাহত রাখব এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।'

তিনি বলেন, 'এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র আজ বাংলাদেশে মৃত। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষের কথা নয়। এটা সারা বিশ্বের যারা গণতন্ত্রকামী মানুষের রয়েছেন, যেসব গণতন্ত্রকামী দেশগুলো রয়েছে এবং সারা বিশ্বের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তারা সবাই এক বাক্যে একটি কথা বলেছে যে, বাংলাদেশে আজকে একদলীয় শাসনের পরিণত হয়েছে।'

'এখানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই, এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, এখানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, এখানে মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা নতুন করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে আমরা ধারণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে যাব। এটাই আমাদের শপথ,' যোগ করেন তিনি।

জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে গিয়ে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করে।

পরে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাখাওয়াত হাসান জীবন, কায়সার কামাল, তাইফুল ইসলাম টিপুসহ যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্র দল, তাঁতী দল, মতস্যজীবী দল, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Comments