এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে, কোটা কোনো ইস্যু না: শেখ হাসিনা

এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে, কোটা কোনো ইস্যু না: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কিন্তু রাজনৈতিক কিছু না—এগুলো সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ।'

সোমবার বিকেলে গণভবনে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সহিংসতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আজকে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বব্যাপী একটা মর্যাদার আসন পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন সবাই সমীহ করে চলে, সবাই সম্মানের চোখে দেখে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে তুলে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।

'এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে, কোটা কোনো ইস্যু না, একে একে যে কটা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জনগণের সেবা দেয়, যে কটা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করে সেটা ধ্বংস করা,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা। আর এখানে শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি, জামায়াত এরাই কিন্তু...এবং জঙ্গি এরা। জঙ্গিরা; এরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।'

এর আগে গণভবনে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে শেখ হাসিনা বলেন, 'সেই ৭৫ সালের পর থেকে আমি বলবো ৯৬ সাল পর্যন্ত এবং আমরা সরকারে আসার পরেও প্রতিদিন বোমা, গুলি, মারপিট, লাশ, সেশন জট—এই অবস্থা ছিল। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যে রিফর্ম নিয়ে আসি, তাতে আমাদের ডিগ্রিগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে। সিমেস্টার সিস্টেম করা, গ্রেডিং করা, সমস্ত কিছু কিন্তু পরিবর্তনটা আমাদেরই আনা।

'যখন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নতি হয়। ৭৫ সালের পর তো মিলিটারি ডিক্টেটররা ছিল একের পর এক। ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, দেশের কতটুকু উন্নতি হয়েছিল? দেশ কতটুকু এগিয়েছিল? কিছুই না। আমাদের স্বাক্ষরতার হারই ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ। আজকে আমরা ৭৮ ভাগে উন্নীত করেছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ কে করেছে? হাতে মোবাইল ফোন-ল্যাপটপ, ইন্টারনেট; ৯৬ সালের আগে একজনকেও দেখিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যারা বিদেশ থেকে এসেছে, হয়তো দুই-চারজন,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এ দেশের ডিজিটাল সিস্টেম তো আমারই করে দেওয়া। হাতে হাতে মোবাইল ফোন, এটা তো আওয়ামী লীগই করে দিয়েছে! আন্দোলনের সফলটা হলো আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেওয়া; বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে যে উন্নত জীবন দিতাম, সেটাকে নষ্ট করে দেওয়া। সেটাই তো করা হলো!'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এই আন্দোলনের ঘাড়ে চেপেই তো জামায়াত-শিবির, বিএনপির সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেয়ে গেল। তার সঙ্গে জুটলো কিছু অতি বাম, অতি ডান। এটা আবার অদ্ভুত ব্যাপার যে, আমাদের অতি বামপন্থীরা এখন শিবিরের লেজুড়বৃত্তি করে, জামায়াতের লেজুড়বৃত্তি করে। তাদের সাথে এখন এক সাথে হয়ে গেল। এটা একটা অদ্ভুত সমাজ! আমি জানি না, এদের কীসের আদর্শ, কীসের নীতি, কী আছে বলতে পারব না।

'আমার প্রশ্ন যে, অপরাধটা কী করলাম তাহলে? মানুষের জীবনমান উন্নত করা? মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা? চিকিৎসার ব্যবস্থা করা? বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছি। আমার বাবা-মা সবাইকে হত্যা করেছে, তারপরেও সেই কষ্ট বুকে নিয়ে আমি এসে শুধুমাত্র এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, মানুষ একটু ভালো থাকবে। মানুষ উন্নত জীবন পাবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলতে পারি। সেই সম্মানটা তো আমি এনে দিয়েছি বাংলাদেশকে। এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না! আজকে যেখানে যাবে, বাংলাদেশ শুনলে সমীহ করে এবং মর্যাদার সাথে দেখে। কিন্তু তাদের এই আন্দোলন করে, আর আমাকে খাটো করতে যেয়ে বাংলাদেশটাকে কোথায় টেনে নামাল, সেটা একবারও বোধ হয় তারা চিন্তা করে না। এদের মধ্যে যদি এতটুকু দেশপ্রেম থাকতো, এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকতো, তাহলে হয়তো এটা করতো না,' যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'যে বাংলাদেশটাকে আমি দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকে বিশ্বে একটা সম্মানের জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম, সেটাকে ধূলিসাৎ করে দিলো। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখের। আরেকটা কথা, এরা এত টাকা কোথা থেকে পায়? এত টাকা কোথা থেকে পেল? প্রতিদিনে তাদের আন্দোলনে এসে যে খরচ, কে দিয়েছে টাকা? আজকে যদি ঘূর্ণিঝড় আসে, আমাদের কিন্তু মানুষকে সাহায্য করবার কোনো শক্তি থাকবে না! কারণ সমস্ত কিছু পুড়িয়ে দিয়ে গেছে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ টেলিভিশন; ওই যুদ্ধের সময় কেউ টেলিভিশন পোড়ায়নি। আজকে বিএনপি-জামায়াত-শিবির এরাই তো পড়ালো। ডিজাস্টারে পুরো ম্যানেজমেন্টটা ছিল ডিজিটাল সিস্টেম। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথায় কী হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে খবর পাওয়া, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া; সে রকম চমৎকার একটা ব্যবস্থা আমি করে দিয়েছিলাম। আগে তো কিছুই ছিল না। একদম আগুন দিয়ে পোড়ানো। যে কাজগুলো জনগণের জন্য সেগুলো একে একে তারা ধ্বংস করে ‍দিলো। কার স্বার্থে এটা তারা করছে সেটাই আমার প্রশ্ন।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

17h ago