ঐক্যের ডাক অটুট রেখে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে: আমির খসরু

amir khasru mahmud chowdhury
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ফাইল ছবি

দ্রুত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, ফ্যাসিস্ট উঁকিঝুঁকি মারছে, এই জাতীয় ঐক্য ভাঙা যাবে না। তারেক রহমানের ঐক্যের ডাক অটুট রেখে এগিয়ে যেতে হবে নির্বাচনের দিকে, এগিয়ে যেতে হবে গণতান্ত্রিক সরকারের দিকে।

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আলমাস সিনেমা হলের সামনে ৭ই নভেম্বর বিপ্লব এবং সংহতি দিবস উপলক্ষে এক র‍্যালি-পূর্ব সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী এই র‍্যালিতে অংশ নেন। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই সভার কারণে নগরীর ওয়াসা থেকে কাজীর দেউড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রধান অতিথির ভাষণে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'তারেক রহমান বলেছেন এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এই সরকারকে কে সমর্থন দিয়েছি, দিচ্ছি এবং দিয়ে যাব। আমরা চাই এই সরকার যে ট্রানজিশনের মাধ্যমে কাজ করবে, তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করব, আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না।'

এই গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি এবং তারেক রহমানের নেতৃত্ব আছে দাবি করে আমির খসরু বলেন, 'আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছি, তখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। আমরা যদি সেই প্রেক্ষাপট তৈরি না করতাম, সেই অবস্থার সৃষ্টি না করতাম, শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানো যেত না।'

'এখন অনেক গল্প শুনছি। শেখ হাসিনা পতনের গল্পের আর শেষ নেই। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি, ওরা নাকি এটা করেছে, ওটা করেছে, সেটা করেছে। গত ১৫ বছর আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, আমরা জীবন দিয়েছি, গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছি, গুম হয়েছি, জেলে গিয়েছি, কারাগারে ছিলাম। কই তোমাদের কাউকে তো দেখি নাই। তোমাদের কেউ আমাদের সঙ্গে আসেনি', বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'তাহলে যে আন্দোলনে আমরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে, আমাদের নেতাকর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীদের চাকরি হারাতে হয়েছে, নেতাকর্মীদের ব্যবসা হারাতে হয়েছে, নেতাকর্মীদের পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে, দিনের পর দিন চিকিৎসার অভাবে জেলে মরতে হয়েছে, নেতাকর্মীরা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে। তোমাদের কয়জন?'

তিনি বলেন, 'হিসাব-কিতাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে, আমরা কিন্তু হিসাব-কিতাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাই, সবাই মিলে শেখ হাসিনার বিদায়-পরবর্তী দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতান্ত্রিক মাধ্যমে দেশবাসী নির্বাচিত করবে কে সংসদে যাবে, সরকারে যাবে। জবাবদিহিতা থাকবে, কোনো জবাবদিহিবিহীন সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।'

'জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, তাদের দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা বুঝবে না', বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমান একটি বয়ান দিয়ে কিছুদিন রাষ্ট্র চালিয়েছেন। সেটি টিকেনি। জনগণের সমর্থন ছাড়া কিছু টিকে না। পরবর্তীতে হুসেইন মো. এরশাদ এসে নতুন বয়ান দিয়েছেন, তাকে আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরাজিত করে সরিয়ে দিয়েছি। তারপরে এখন আরেক বয়ান, এই বয়ানের অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে। এই বয়ানের মধ্যে নেই বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়মে হবে—সেই বয়ান নেই। সেই বয়ান হচ্ছে সংস্কারের বয়ান।'

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের আগেই বিএনপি এই প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, 'সংস্কারের প্রস্তাব বিএনপি আরও ছয় বছর আগেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দিয়ে রেখেছে। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম, তারা ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। এই সংস্কারে সবকিছু আছে, আপনারা যা বলেছেন তার মধ্যে আছে, এর বাইরেও আছে। আপনাদের থেকে আমরা সংস্কার করতে আরও বেশি আগ্রহী।'

দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'যে কয়টি সংস্কার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে, সেগুলো সংস্কার করে ফেলেন। তারপরে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান এবং যে সংস্কারের আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব না, সেটি বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে।'

'এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যা কিছু হবে, সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়, নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। আর এই কারণে আমরা এক দফা দিয়েছিলাম। মনে আছে, ২৩ তারিখের এক দফা, তারপরে আপনারা এক দফায় আসছেন, ঝাঁপিয়ে পড়েছি, হাসিনা পালিয়ে গেছে—এটাই সত্য, এটাই বুঝুন', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago