নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত, আলোচনা না করায় বিস্মিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশা করেছিল প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি তা না করায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে।
দলটি আরও বলে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে।
'তারপরও জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি,' বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
আজ বুধবার রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, 'আপনারা জানেন, জামায়াতের আমির জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরছেন। গত ১৬ এপ্রিল তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, রোজার আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা অধিকতর উপযুক্ত হবে। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা গতকাল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ—ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন, তা সেই সময়োপযোগী প্রস্তাবেরই প্রতিফলন। আমরা এ ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেটি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে সরকারপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে থাকেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আমরা আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেই গণতান্ত্রিক ও পরম্পরাগত প্রক্রিয়াকে সম্মান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ করবেন।
তাহের বলেন, বাংলাদেশের জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে উল্লেখিত জনআকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক, বলেন তিনি।
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তাহের বলেন, 'গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-উলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই; যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল নয় দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল—সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।'
'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ জন্য ছয়টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। অথচ জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, 'আমরা লক্ষ করছি, নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।'
'এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তার আইনিভিত্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তিতে ৭০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুমোদন হয়েছিল।'
আরও উদাহরণ টেনে তিনি প্রশ্ন রাখেন, অতীতে এত নজির থাকার পরও এখন জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে বাধা কোথায়?
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের আকাঙ্ক্ষা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনিভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।'
Comments