‘দুই মিনিটেই ফিরে আসব, চিন্তা কোরো না’ মায়ের সঙ্গে সমুদ্রের শেষ কথা

মায়ের সঙ্গে মোস্তফা জামান সমুদ্র। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার রামপুরায় গুলিতে নিহত হন ১৭ বছরের তরুণ মোস্তফা জামান সমুদ্র। এ সময় দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৬৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। যারা নিহত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কারও সন্তান, বন্ধু, ভাই, স্বজন। তাদেরই একজনের মারা যাওয়ার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে এই প্রতিবেদন।

 

প্রতি শুক্রবার মোস্তফা জামান সমুদ্র তার বাবা তাজুল কালের সঙ্গে জুমার নামাজে যায়। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর তাজুল তার রামপুরার ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন। সমুদ্র তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেই বাসায় ফিরে আসবে বলে বাবাকে কথা দিয়ে চলে যায়।

কিন্তু সমুদ্র আর ফিরে আসেনি।

সেদিন রামপুরায় পুলিশ ও বিজিবি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়লে সমুদ্র নিহত হয়। একটি ভ্যানে করে তার মরদেহ বাসায় আনা হয়।

সমুদ্র যেদিন মারা যায় ঠিক একদিন পরই তার সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে দাফনের জন্য নেওয়া হলো মুন্সিগঞ্জে, সাদা কাফনে মুড়িয়ে।

এক মায়ের দুঃস্বপ্ন

সমুদ্র মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় তার মা মাসুদা জামান ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার ফোনে কল করেন। ফোন ধরে সমুদ্র বলেছিল, 'মা চিন্তা কোরো না, আমি দুই মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে আসব।'

এর পর মিনিটের অপেক্ষায় ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। বার বার ফোন না করেও তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মাসুদা জামান।

ততক্ষণে রামপুরা, বাড্ডা ও বনশ্রীতে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টার জানান, আকাশে খুব নিচু দিয়ে চক্কর কাটছিল হেলিকপ্টার। সেখান থেকে ছোড়া হচ্ছিল টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। আর রাস্তায় আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালাচ্ছিল বিজিবি ও পুলিশ।

সেদিন রামপুরার আশপাশের হাসপাতালগুলোতে অন্তত ১৩ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যেই ছিল ১৭ বছরের তরুণ সমুদ্র। ডেল্টা হাসপাতালের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল সে। তখনো তার মোবাইল ফোনে কলের পর কল করছিলেন তারা মা।

এক পর্যায়ে সমুদ্রের মায়ের কল রিসিভ করে তার এক বন্ধু বলে, 'আন্টি, সমুদ্রকে গুলি করা হয়েছে। ও ডেল্টা হাসপাতালে আছে। তাড়াতাড়ি এখানে আসেন।'

সে সমুদ্রের মাকে বলতে পারেনি তাদের ছেলে মারা গেছে।

রাস্তায় গোলাগুলি উপেক্ষা করে তাজুল ও মাসুদা হাসপাতালে ছুটে আসেন। ডাক্তাররা জানান, তাদের ছেলে আর বেঁচে নেই।

ছেলের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মাসুদা। চিৎকার করে বলছিলেন ওর হার্ট চলছে। ওর শরীর এখনো গরম আছে। ছেলেকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা হিসেবে তারা তাকে বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা নিশ্চিতভাবে জানিয়ে দেন তাদের ছেলে আর বেঁচে নেই।

ডাক্তাররা জানান, একটি বুলেট সমুদ্রের হাত ভেদ করে পাঁজরে ঢুকে যায়। এর ফলে মারাত্মক রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।

মুন্সিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে মাসুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হ্যাঁ, ওকে গুলি করা হয়েছে। তবে আমি বলব না কে ওকে গুলি করেছে। আমরা জানি না কে এটা করেছে। আমরা বিচার চাই না। আমার ছেলে মারা গেছে। আমরা তাকে ফিরে পাব না। বিচার চেয়ে আর কী লাভ'+

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন দ্য ডেইলি স্টারের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি তানজিল হাসান।)

Comments

The Daily Star  | English

Choking waters: The dangerous decline of oxygen in Dhaka’s peripheral rivers

Bangladesh, often described as a land of rivers, is criss-crossed by more than 230 major and minor waterways.

16h ago