হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে আদালতে হট্টগোল, এজলাস থেকে নেমে গেলেন বিচারক, থানায় এজাহারের নির্দেশ

বিচারক মামলা তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর হট্টগোল শুরু হয়।
চট্টগ্রাম আদালত। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪২৫ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি মামলা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের আদালতে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী মামুন আলী। তবে এই মামলা নিয়ে হট্টগোল হয়, উত্তপ্ত হয় আদালত কক্ষ।

আদালত সূত্র জানায়, অভিযোগ নিয়ে বাদীর বক্তব্য নেওয়ার পর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

এ সময় আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সরাসরি থানায় মামলা নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর সাবেক পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, নগর গোয়েন্দা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেহানার ছেলে রিদওয়ান ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানার সাবেক ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদুল আমিন, হালিশহর থানার তৎকালীন এসআই জামাল উদ্দিন, মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ।

মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট নগরের হালিশহর এলাকায় বাদী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান করছিলেন। ওই সময় হালিশহর থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এবং সেখানে উপস্থিত থাকা বিএনপির ১৭ কর্মীসহ বাদীকে ধরে থানায় নিয়ে। 

পরে থানায় ওসির নেতৃত্বে বাদীকে বেঁধে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে বাদীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। নইলে ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। 

বাদীকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয় বাবার কাছে। বাদীর বাবা ওসির দেখানো দুজনকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দেন।

এদিকে ওসি প্রণব চৌধুরী তার মুঠোফোনে আসামি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভিডিও কল দিয়ে বাদীকে নির্যাতনের চিত্র দেখান। পরে বাদী জামিনে বেরিয়ে আসার পর কয়েক দফায় তাকে থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

আজ আদালতে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের আদালতে দুপুর ১২টার দিকে মামলার আবেদন করেন বাদী মামুন আলী। 

প্রায় ১০ মিনিট শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেন পিবিআইকে তদন্তের জন্য। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন। 

সে সময় তারা বলতে থাকেন পিবিআইকে নয়, সরাসরি থানায় মামলা নেওয়ার আদেশ দিতে হবে। একপর্যায়ে চিৎকার শোরগোল শুরু হলে বিব্রত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান। 
ওই সময় বিচারককে লক্ষ্য করে কটূক্তি করা হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। পাশাপাশি আদালতের বারান্দায় আদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে এক থেকে দেড়শ লোক। 

আইনজীবীরা জানান, বাদীর সঙ্গে অনেক লোক এসেছিলেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিচারক এজলাসে আসেন। বাদীর করা আবেদন সরাসরি হালিশহর থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে নিতে আদেশ দেন।

এ বিষয়ে বাদী ব্যবসায়ী মামুন আলীর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী আরশাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'শুরু থেকে আমাদের আবেদন ছিল সরাসরি থানায় মামলা হিসেবে নেওয়ার আদেশ যেন দেন বিচারক। কিন্তু আদালত তা না দেওয়ায় আমরা পুনরায় জোর আবেদন করেছি। আদালতে অনেকে থাকে, কে বা কারা কী করেছে তা বলতে পারছি না।'

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার প্রসিকিউশন এএএম হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এজলাসে হট্টগোল ও আদালতের বারান্দায় মিছিল হচ্ছে শুনে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Turning the tide: Critical reforms to correct 15 years of misrule

As Bangladesh enters a new era following the ouster of the Sheikh Hasina-led Awami League government, which ruled over the nation for 15 years and is responsible for countless financial wrongdoings, the need of the hour is to reform the overall system of governance.

14h ago