জানা-অজানা

চীনা স্মার্টফোনের আধিপত্য কমাতে যা করছে ভারত

মাইক্রাম্যাক্সের কারখানা: ছবি: মাইক্রোম্যাক্সের সৌজন্যে

ভারতের বাজারে যত স্মার্টফোন বিক্রি হয়, তার বেশিরভাগই চীনে উৎপাদিত। ভারতের অন্যতম বৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিসিল রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটিতে যত স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ ভাগেরই উৎপাদনকারী দেশ চীন।

দক্ষিণ এশিয়ায় আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় দেশটির স্মার্টফোন বাজারে চীনের প্রভাব খুবই দৃঢ়। তবে সম্প্রতি এটি কমতে শুরু করেছে। ভারতীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো এখন স্থানীয় বাজারে সুবিধাজনক অবস্থান করে নিতে পারছে।

ভারতে চীনা স্মার্টফোনগুলোকে যেসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম মাইক্রোম্যাক্স। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি মোবাইল বিক্রি শুরু করে। মাত্র ২ বছরের মধ্যে এটি ভারতের সবচেয়ে বড় ফিচার ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

এমন অভাবনীয় উত্থানের পরও কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগারওয়াল বলেন, 'বাজারে চীনা স্মার্টফোনগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা আসলেই কঠিন।'

মাইক্রোম্যাক্স নতুন ফোন বাজারে ছাড়লে ১০ লাখ ইউনিট বিক্রির আশা করে। কিন্তু একটি চাইনিজ ফোন ১ কোটি ইউনিট বা তারও বেশি বিক্রি হয়। এর ফলে চীনা ব্র্যান্ডগুলো দাম কম রাখতে পারে। রাজেশ বলেন, 'তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী।'

চীনা ব্র্যান্ডগুলোর আরও বড় সুবিধা হচ্ছে, তারা সব কাঁচামাল চীন থেকেই সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তা পারে না।

ভারতে স্মার্টফোনের চার্জার, ক্যাবল ও ব্যাটারি তৈরি হলেও স্ক্রিন ও চিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে বিদেশ থেকে। রাজেশ বলেন, 'আমাদেরকে সব উপাদান স্থানীয়ভাবে করতে হবে।'

ভারত সরকার স্থানীয় মোবাইল ফোন উৎদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের এপ্রিলে দেশটির সরকার টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রাংশের জন্য প্রোডাকশান লিংকড ইনসেটিভ বা পিএলআই প্রকল্প চালু করেছে। ভারতেই সব ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দেশটির সরকার বহু বছর ধরে যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এটি তার সর্বশেষ সংযোজন।

পিএলআই প্রকল্পে ভারতে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশে ভর্তুকি দেওয়া হয়, যাতে ‍উৎপাদন বাড়িয়ে দাম আরও কমানো যায়।

ইন্ডিয়া সেলুলার ইলেক্ট্রনিক অ্যাসোসিয়েশশের (আইসিইএ) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ভারতে উৎপাদিত ফোনগুলোর ১৫-২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়, বাকি সব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

পিএলআই প্রকল্পের উদ্দেশ্য, এই সংখ্যাকে ৩৫-৪০ শতাংশে উন্নীত করা।

আইসিইএ চেয়ারম্যান পঙ্কজ মোহিন্দ্রো বলেন, 'উৎপাদন সংক্রান্ত প্রণোদনা ইলেক্ট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে একটি বাঁক বদলকারী ঘটনা। ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল স্মার্টফোন বাজার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী দেশ।'

ভারতের আরেক মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাভা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হারি ওম রাই বলেন, 'মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভারত হতে যাচ্ছে  পরবর্তী বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল।'

তিনি বলেন, 'চীন ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে, সেখানে শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ছে। দেশটি অন্যান্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার যে সুবিধা পেতো, সেটি কমছে। বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানই তাদের পণ্য উৎপাদনে আর এককভাবে চীনের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না। গত বছরের নভেম্বরে অ্যাপলের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের কারখানায় করোনা নীতিমালা নিয়ে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এতে উৎকন্ঠার পালে আরও হাওয়া দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিতে চায়, ভারত তাদের জন্য আকর্ষনীয় ক্ষেত্র।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago