কালো বিড়ালকে যখন থেকে অশুভ ভাবা শুরু হলো

একটা সময় কালো বিড়াল ছিল সম্মানিত। প্রাচীন মিশরে বিড়াল হত্যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। মিশরীয়রা ছিল পৌত্তলিক। সে সময় মনে করা হতো, প্রত্যেক দেব-দেবীর একটি সুনির্দিষ্ট প্রতীক থাকে, যার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে থাকেন। যেমন- দেবী ডায়নার প্রতীক ছিল কালো বিড়াল। 
কালো বিড়ালকে যখন থেকে অশুভ ভাবা শুরু হলো
ছবি: রয়টার্স

একটা সময় কালো বিড়াল ছিল সম্মানিত। প্রাচীন মিশরে বিড়াল হত্যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। মিশরীয়রা ছিল পৌত্তলিক। সে সময় মনে করা হতো, প্রত্যেক দেব-দেবীর একটি সুনির্দিষ্ট প্রতীক থাকে, যার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে থাকেন। যেমন- দেবী ডায়নার প্রতীক ছিল কালো বিড়াল। 

তবে ১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পোপ নবম হেনরী কালো বিড়ালকে শয়তানের দোসর ঘোষণা করে একে নিধনের নির্দেশ দেন। মূলত ক্যাথলিকদের সঙ্গে পৌত্তলিকতার দ্বন্দ্বের ফলেই এটি হয়। কালো বিড়াল প্যাগানদের কাছে অতী সম্মানিত হওয়ায় তা ক্যাথলিকরা মানতে পারেনি। 

পরবর্তীতে ষোল থেকে সতের শতকে ক্রমান্বয়ে ডাইনিদের প্রতীক হিসেবে দেখানো হতে থাকে কালো বিড়ালদের। এর কারণ সেই ১৩ শতক থেকেই কালো বিড়ালকে শয়তান বলে করা প্রচারণা। ১২৩৩ সালে পোপের ওই ঘোষণার পর ব্যাপকভাবে কালো বিড়াল ধরপাকড় শুরু হয়। ফলে চতুর্দশ শতাব্দীর ভেতরই ইউরোপের অনেক জায়গায় কালো বিড়াল নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। 

রাতে বিড়ালের চোখের মণি জ্বলজ্বল করায় অনেকদূর দেখতে পায়। তাছাড়া, কালো বিড়াল নিশাচর। রাতের অন্ধকারে মিশে যায় তার শরীর। সে সময় থেকে ইউরোপে প্রচার করা হয় ডাইনিরা শয়তানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কালো বিড়ালের মাধ্যমে। এর পেছনেও ছিল অতীতে প্যাগানদের দেবী ডায়নার বাহন হওয়ার ব্যাপারটি। 

পৌত্তলিকদের ভেতর যাদুবিদ্যা ও তন্ত্রসাধনা জ্ঞানের পরিচায়ক হলেও চার্চের চোখে তা ছিল নিষিদ্ধ। তাই এ ধরনের চর্চাকে 'শয়তানের চর্চা' হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের কাছে দেবতুল্য কালো বিড়ালকেও এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। তন্ত্রসাধনা সে সময় পরিচিত ছিল 'বিশেষ জ্ঞান' হিসেবে। রোগ সারানোতেও ছিলো এর ব্যবহার ৷ তবে ক্যাথলিক প্রচারণার ফলে ব্যাপারটি পুরোপুরি শয়তান উপাসনা- এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। 

এ ছাড়া আত্মহত্যাকারী ও পাপীদের আত্মা কালো বিড়াল হয়ে ফিরে আসতো ও ডাইনিদের কাজে লাগতো বলেও কুসংস্কার ছিল। এমন বিশ্বাস ছিলো যে, খারাপ আত্মারা ডাইনিদের সাহায্যে আসে। এই আত্মারা মিডিয়াম হিসেবে কালো বিড়ালের দেহে ভর করতে পারে। ডাইনিদের সঙ্গে থাকা বিড়াল হয় মন্ত্রপূত, তাদের ব্যবহার করে ডাইনিরা শয়তানের কাছ থেকে সংকেত পায়। এ ছাড়া নিজেদের আসন্ন বিপদের কথাও ডাইনিরা আগাম জেনে ফেলতে পারতো কালো বিড়ালদের গতিবিধি দেখে! কারও ক্ষতি করতে চাইলে মন্ত্রপূত করে কালো বিড়ালকে পাঠাতো! 

অবশ্য কালো বিড়ালদের নিয়ে এমন প্রচলনের কোনো সত্যতা নেই। তবে ১৩ শতকের সেই প্রচারণার ফলে আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে কালো বিড়াল নিয়ে অহেতুক ভয় ও অযৌক্তিক সব সংস্কার। ঘরে পালনের ক্ষেত্রেও আজও অনেকাংশেই এরা ব্রাত্য।

 

তথ্যসূত্র: সলিডগোল্ডপেটডটকম
 
 

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

6h ago