বিলিভ ইট অর নট

পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ ও ৪০০ বছরের অনুসন্ধান

পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ ও ৪০০ বছরের অনুসন্ধান
জিলান্ডিয়া মহাদেশ। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় আমরা প্লুটোকে গ্রহ বলে জানতাম। একদিন বিজ্ঞানীরা জানালেন গ্রহ হবার যোগ্যতা নাকি প্লুটোর নেই!

প্লুটো তো তবু অনেক দূরের গ্রহ, কিন্তু আমাদের এই পৃথিবীর অনেক কিছুই এখনো আজানা আমাদের কাছে। 

নিরন্তর চেষ্টার ৩৭৫ বছর 

বইপত্রে আমরা পড়ি ৭টি মহাদেশের কথা। কিন্তু যদি বলা হয় পৃথিবীতে আসলে মহাদেশ ছিল ৮টি! শুনতে অবাক লাগলেও ব্যাপারটি কিন্তু সত্যই। 

এই অষ্টম মহাদেশের অনুসন্ধানের জন্য হয়েছে রোমাঞ্চকর বেশকিছু চেষ্টাও। বহু আগে থেকেই, স্পষ্ট করে বললে প্রাচীন রোমান যুগ থেকেই মানুষের মুখে ফিরত এর কথা। আর এটি কিন্তু ছিলো আমাদের নাকের ডগাতেই! 

পুরাণেও উল্লেখ ছিলো এর কথা। 'টেরা অস্ট্রালস' নামের এই ভূখণ্ডটির সন্ধান অন্তত ১৭ শতকের আগে কেউ করেননি। তবে ১৬৪২ সালে  নিউজিল্যান্ড উপকূলে যখন আবেল তাসমান পৌঁছালেন একপাল ভবঘুরেসমেত, তাদের পড়তে হয় স্থানীয় মাউরি জনগোষ্ঠীর খপ্পরে। হতভাগারা কেউ আর ফিরতেই পারেননি। আবেল কোমোরকম বেঁচে ফেরেন। যিনি ১৬৫৯ সালে মারা যান।

জিলান্ডিয়া

তবে এরপরও পুরাণে বর্ণিত দক্ষিণাঞ্চলে থাকা সেই ভূখণ্ডের খোঁজ থেমে থাকেনি। যুক্তরাজ্যের ক্যাপ্টেন জেমস কুকও চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি এটি খুঁজে পেতে, কিন্তু সফল হননি। তবে শেষমেশ ১৮৯৫ সালে এসে জট খুললো। 

বৃহৎ আয়তনের মহাদেশ 

১৮৯৫ সালে জেমস হেক্টর রয়েল সোসাইটি অব নিউজিল্যান্ড-এর সঙ্গে এ বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি এতে লেখেন, নিউজিল্যান্ড মূলত এক সুবিস্তৃত পর্বতমালার অবশেষ, যা এক সময় গড়েছিলো এক মহাদেশ; যা বিস্তৃত হয়েছিলো- পূর্ব ও দক্ষিণে যতদূর যাওয়া যায়। তবে তার এই মত বেশিরভাগ গবেষক তেমন আমলে নেননি। 

জিলান্ডিয়ার মহাদেশ হবার কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন জেমস হেক্টর, ছবি: সংগৃহিত
 
তবে ২০১৭ সালে একদল গবেষক যখন জিলান্ডিয়া বলে অষ্টম মহাদেশ খুঁজে পাওয়ার কথা বলেন তখন হেক্টর আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যান্ডি টুলোক জানান, এই মহাদেশটি ছিল ১.৮৯ মিলিয়ন বর্গমাইল জুড়ে। যার ৯৪ শতাংশ তলিয়ে গেছে ৬ হাজার ৫৬০ ফুট পানির নিচে। 

কেন মহাদেশ? 

মহাদেশ হতে হলে পর্বতমালার বৈচিত্র‍্য, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যথেষ্ট উচ্চতা, ঘন আবরণ ও সুবিশাল আয়তন থাকতে হয়। জিলান্ডিয়ার সবই আছে। তা বলা হয়েছিলো ষাটের দশকেই। তবে এ নিয়ে আলোড়ন শুরু হয় নব্বই দশকে। নিউজিল্যান্ড যে হারিয়ে যাওয়া এক মহাদেশের অংশ, সে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলেই সমুদ্র আইন অনুযায়ী আরও ৬গুণ ভূখণ্ড পাবেন তাদের অধিবাসীরা! 

বৈজ্ঞানিক উপাত্ত কী বলছে 

পর্বতের নমুনা থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট ছবি সংগ্রহ কিংবা ভূ-আবরণের ঘনত্ব বিচার- কিছুই বাদ যায়নি। 

ফল বলছে, হ্যাঁ- আছে, অষ্টম মহাদেশ আছে! নিউজিল্যান্ড বের করে এনেছে জিলান্ডিয়ার সেই ইতিহাস। আজকের নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে লর্ড হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, বল'স পিরামিড ও নিউ সেলিডোনিয়া- সবটা মিলেই ছিলো এর অস্তিত্ব। 

তবে বিজ্ঞানীদের এমন অনুমানও রয়েছে যে, জিলান্ডিয়া ছিলো গন্ডোয়ানাল্যান্ডের একটি অংশ। প্রাচীন সেই অতিমহাদেশ- গন্ডোয়ানা ছিলো পৃথিবীর দক্ষিণাংশের পুরোটা জুড়ে। যদিও এখনো অনেক রহস্যেরই মীমাংসা বাকি, তবে একটি বিষয় নিশ্চিত। সাগরের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া এই মহাদেশ পাল্টে দিয়েছে ভূমিবিষয়ক অনেক সমীকরণ।

 

তথ্যসূত্র: রিপলিস বিলিভ ইট অর নট 
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 
 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago