বিলিভ ইট অর নট

যেভাবে গোলাপি হলো মেয়েদের রং, আর নীল ছেলেদের

যেভাবে গোলাপি হলো মেয়েদের রং, আর নীল ছেলেদের
ছবি: সংগৃহীত

জেন্ডার অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েতে নানা বিভাজন দেখা যায়। যেমন, পুতুল নিয়ে খেলবে মেয়েরা, গোলাপি জামাও পরবে তারা। তবে ছেলেরা পরবে নীল। কিন্তু গোলাপি কিংবা নীল সুদূর অতীতে নির্দিষ্ট কোনো জেন্ডারের জন্য নির্ধারিত রং ছিলই না। 

উনিশ শতকের শেষদিকেও শিশুদের জেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে আলাদা রংয়ের পোষাক পরানোর চল ছিল না। সাদাকে মনে করা হতো পবিত্র রং। তাই নিষ্পাপ শিশুদের 'নির্মল রং' সাদা পোশাক পরানো হতো। তাছাড়া এর ভেতর ছিল বৈষয়িক চিন্তাও। শিশুরা ঘনঘন প্রস্রাব ও মলত্যাগ করে। সাদা রংয়ের পোশাকে সেটি সহজে বোঝা যায় ও কাপড় বদলে দেওয়া যায়। যদিও সাদা কাপড়ে দাগ পড়লে তা তোলা শক্ত, তবু সাদাই ছিলো জেন্ডার নির্বিশেষে শিশুদের পোশাক। 

তবে বিশ শতক থেকে এই জায়গায় আসতে থাকে পরিবর্তন। ম্যাগাজিনে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, পত্রিকার ফ্যাশন বিষয়ক পাতায় শিশুদের পোশাক নিয়েও নানান বিজ্ঞাপন ও লেখা শোভা পেতে থাকে। 

১৯১৮ সালে আর্নশ'স ইনফ্যান্টস' ডিপার্টমেন্ট তাদের এক লেখায় গোলাপিকে ছেলেদের ও নীলকে মেয়ে শিশুদের জন্য উপযোগী রং বলে মত দেয়। কারণ হিসেবে গোলাপিকে 'তীব্র' ও নীলকে 'স্নিগ্ধ' রং বলা হয়। 

কিন্তু একশ বছর পরের পৃথিবীতে বিবেচনা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। বিশেষত গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই পরিবর্তনটি লক্ষ্য করা যায়। এর পেছনে কাজ করেছে মূলত ব্যবসায়িক হিসেব-নিকেশ।

আশির দশকের পূর্বে অন্তত ৭ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে উভয়ই একই ধরনের পোশাক পরতো। বড় সন্তানের পোশাক ছোটরাও ব্যবহার করতে পারতো। আশির দশক থেকে মেয়েদের কাপড়ে আলাদা ট্রিম ও নকশা ব্যবহার করে শিশুদের পোশাকের সর্বজনীন রূপটি ভাঙা হয়। মেয়েদের জন্য গোলাপি ও ছেলেদের জন্য নীল রং নির্বাচন করে পোশাকের ধরনও আলাদা করা হয়। এতে পোশাকের বিক্রি বাড়ে ও কোম্পানিগুলো লাভবান হয়। 

আশির দশক থেকে বাবা-মা আল্ট্রোসনোগ্রাফির মাধ্যমে আগেই সন্তানের লৈঙ্গিক পরিচয় জানার সুযোগ পান। তাই অনেকে সন্তানের জন্য আগেই কাপড় কিনে রাখতে শুরু করেন। এ সময় থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে গোলাপি রংকে মেয়েদের ও নীল রংকে ছেলেদের পোশাকের জন্য উপযোগি করে প্রচার করা হয়। বাবা-মায়েরা সন্তানের লৈঙ্গিক ভিন্নতা অনুসারে আলাদা দুটো রং বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ হন। এতে করে জেন্ডারগত ভিন্নতাকে ভিন্নভাবে উদযাপন করারও সুযোগ তৈরি হয়। 

তবে যুগ বদলাচ্ছে। এখন জেন্ডারকে প্রথাবদ্ধভাবে দেখার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এ নিয়ে আমেরিকায় আন্দোলনও হয়েছিল। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থ আবার ফিরিয়ে এনেছে স্টেরিওটাইপ। এ সময়ে এসে যেখানে 'জেন্ডার রোল' নিয়ে মানুষ ভাবছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে; সেখানে রং দিয়ে লৈঙ্গিক বিভেদ তৈরির কোনো যৌক্তিকতা আদৌ নেই। 

 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago