বিবেকের কণ্ঠস্বর ডা. জাফরুল্লাহ, গণতান্ত্রিক দেশ সৃষ্টির যুদ্ধে অগ্র সৈনিক

আজ বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শত শত মানুষ। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে চৈত্র সংক্রান্তিতে তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয় শত শত মানুষ।

প্রতিক্রিয়া জানান বিশিষ্ট জন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, 'জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন আদর্শ বাঙালি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। খবরের কাগজে কেউ কেউ লিখেছেন "পিপলস ডক্টর"। সাধারণ মানুষের ডাক্তার শুধু নন, সাধারণ মানুষের জন্য একজন খাঁটি, অকৃত্রিম বাঙালি। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা অবশ্যই বটে, আমাদের বর্তমান চিকিৎসা সম্বন্ধে পরিবর্তন বা দৃষ্টিভঙ্গির নতুন চিন্তা তার পথিকৃৎ তিনি।"

"ড্রাগ পলিসি যেটা খুব কাজ দিয়েছে আমাদের এখানে, তিনি এর অন্যতম উদ্যোক্তা। জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে আমি চিনি। তার পরিবার, ভাই-বোন কয়েক জনের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। তিনি আমাকে এক নামে ডাকতেন, ছোট ভাইয়ের মতো। তার প্রতি আমি অসীম শ্রদ্ধা জানাচ্ছি,' বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, 'তাকে (ডা. জাফরুল্লাহ) নিয়ে গর্ব করার অনেক কিছু আছে। আমরা বাঙালিরা বাংলাদেশকে প্রকৃত বাংলাদেশে রূপান্তর করা, বাংলাদেশটাকে একটি খাঁটি, অকৃত্রিম বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সাধারণ মানুষের দেশ সৃষ্টি করা, একটি ন্যায়নানুগ, আইনানুগ, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক দেশ সৃষ্টি করা; যেখানে সব মানুষ, সব নাগরিক সমান মর্যাদা ভোগ করবে। সেই বিরাট যুদ্ধে জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন অগ্র সৈনিক ছিলেন। বিশাল শক্তি ছিলেন। আজ তার মহাপ্রয়াণ দিনে আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।'

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'আজকে আমরা গর্ব করি যে, আমাদের ওষুধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। সেই ওষুধ প্রণয়নে তার ছিল অবিচল প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।'

'আমি বলবো, তিনি রাজনীতি করেননি ঠিকই কিন্তু রাজনীতিতে বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি থেকেছেন এবং মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি,' বলেন তিনি।

আপনি কী মনে করেন, আজকের এই সময়ে আরেকজন জাফরুল্লাহ হওয়া কি সম্ভব—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, 'যুগ তো পাল্টায়। যুগের সময়, যুগের মানুষ, যুগের হয়ে আসে। আমি নিশ্চিতভাবে মনে করি, জাফরুল্লাহ ভাই তার যুগে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ; কোনো সন্দেহ নেই। আরেকজন জাফরুল্লাহ বের করা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু জাফরুল্লাহ ভাই যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথ ধরে মানুষ এগিয়ে যাবে এটা আশা করি আমি।'

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, 'কয়েকশ বছর পরপর একটি জাতিতে এমন একজন মানুষ জন্মায়। আমি উনাকে মনে করি আমাদের অঘোষিত অষ্টম বীরশ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন প্রেরণার উৎস। তার মৃত্যুতে জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ করতে পারব না।'

কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মৌলিক জায়গা ছিল গণস্বাস্থ্য। জাফরুল্লাহ একদিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা, আজকে আমরা সেই হিসেবে তাকে সম্মান দিয়েছি। যারা তাকে সম্মান দিয়েছেন তাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। তরুণদের কাছে আমার আবেদন হবে, তার কাছ থেকে শেখা যে, জীবন বলতে কী বোঝায়।'

'আজকে তরুণদের জাফরুল্লার তুলনায় বৃদ্ধ মনে হয়। বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং নতুনভাবে গড়ে তোলা; আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি সমস্যার সমাধান করা, নদীগুলোকে উদ্ধার করা, বিষ ব্যবহার বন্ধ করা, এখানে ক্ষতিকর যা কিছু হচ্ছে বন্ধ করা। যদি আমরা এই কাজগুলো না করি, তাহলে আমাদের আবেগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। তিনি তার মতো করে অন্তত ডায়ালাইসিসের একটি সেন্টার তৈরি করেছেন। তার আগে গরিব মানুষের ডায়ালাইসিস বলে কিছু ছিল না। তিনি ক্যানসার হাসপাতাল করতে চেয়েছিলেন। যাতে করে গরিব মানুষ ক্যানসারের চিকিৎসা পেতে পারে। তরুণরা তার কাছ থেকে এগুলোই শিখবে আগামী দিনে। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে সত্যিকারের সমস্যা যেন আমরা সমাধান করতে পারি,' বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'নানা মাত্রায় নানা বিবেচনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন মানুষের মনে থাকবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি সম্মান পেয়েছেন।'

বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি-এর প্রধান নির্বাহী ও অধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, 'জাফর ভাই অনন্য এবং আমার জীবনে এই রকম মানুষ খুব কম পেয়েছি। সাহস তো আছেই, সে একজন দেশ প্রেমিক। শোষিত মানুষকে এত ভালোবাসতেন। পুরো জীবন দিয়েছেন মানুষের প্রতি, মানুষের জন্য।'

'আমার সঙ্গে ৫ দশকের জানা-পরিচয়। জাফর ভাইয়ের প্রত্যেকটা কাজ হলো গণমানুষের জন্য,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশও তো মিস করবেই, পৃথিবী মিস করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Remittance-rich Sylhet ranks poorest in new index

Long seen as the “London of Bangladesh” for its foreign earnings and opulent villas, Sylhet has been dealt a sobering blow. The country’s first Multidimensional Poverty Index (MPI) has revealed that the division is, in fact, the poorest in Bangladesh when measured by access to education, healthc

5h ago