শিশুকিশোর

কেমন দেশ ব্রাজিল

ব্রাজিল, পেলে
ব্রাজিলের আমাজন। এএফপি ফাইল ফটো

আমাদের দেশের মানুষের কাছে আরেকটি প্রিয় নাম ব্রাজিল। কিন্তু তোমরা কি জানো, বাংলাদেশে ব্রাজিল এত প্রিয় কেন? উত্তর একটাই- তাদের ফুটবল খেলা। ব্রাজিল হলো দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। কিন্তু, সারাবিশ্বে এই দেশটির নাম ছড়িয়েছে তাদের ফুটবলের জনপ্রিয়তা থেকে।

তোমাদের ব্রাজিলের ফুটবল নিয়ে নতুন করে কিছু না বলে বরং দেশটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়ে দিই।

ভৌগলিক অবস্থান

আগেই বলেছি, ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। আটলান্টিক মহাসাগরের নাম শুনেছ নিশ্চয়ই? ব্রাজিল এই আটলান্টিক মহাসাগর বরাবর ৪ হাজার ৫০০ মাইল (৭ হাজার ৪০০ কিলোমিটার) উপকূলরেখাসহ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব দিকে একটি বিশাল ত্রিভুজের আকৃতি নিয়েছে। চিলি ও ইকুয়েডর ছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিটি দেশের সঙ্গে এর সীমান্ত আছে।

ব্রাজিলের ল্যান্ডস্কেপ খুবই বৈচিত্র্যময়। দেশটির উত্তরে আছে বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গল আমাজন। পুরো ব্রাজিল জুড়েই কিন্তু বন আছে, আর ঘন বনের জন্যেও দেশটি বিশ্বে সুপরিচিত। তবে শুকনো তৃণভূমি (যাকে পাম্পাস বলা হয়), দুর্গম পাহাড়, পাইন বন, বিস্তৃত জলাভূমি, বিশাল মালভূমি ও দীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমিও আছে ব্রাজিলে।

উত্তর ব্রাজিলে আমাজন নদী এবং এর চারপাশে গভীর বন আছে। আমাজনকে নদী বললে হয়তো কম বলা হয়ে যাবে। বরং তোমাকে একে বলতে পারো, শত শত জলপথের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। এর মোট দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ২৫০ মাইল (৬ হাজার ৮৪০ কিলোমিটার)। নদীটিতে ভয়ঙ্কর পিরানহা, বোটো বা পিংক রিভার ডলফিনসহ হাজার হাজার প্রজাতি বাস করে।

মানুষ ও সংস্কৃতি

বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ানরা ৩টি জাতিগোষ্ঠী থেকে এসেছে। এরা হলো- আমেরইন্ডিয়ানস, ইউরোপীয় (প্রধানত পর্তুগাল থেকে) এবং আফ্রিকান। উনিশ শতকের শুরু থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি জাপান থেকে এখানে মানুষ আসতে শুরু করে। ফলে, বিভিন্ন সংস্কৃতি মিলে ব্রাজিলে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল পাগল। দেশটি কিছু সেরা খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। তবে, ব্রাজিলের সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবলার হচ্ছেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, যিনি পেলে নামেই সারাবিশ্বে পরিচিত। ব্রাজিল ৫ বার ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে। যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।

প্রকৃতি

ব্রাজিলে বিশ্বের যেকোনো দেশের সবচেয়ে বেশি প্রজাতির প্রাণী বাস করে। দেশটি ৬০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১ হাজার ৫০০ প্রজাতির মাছ, ১ হাজার ৬০০ প্রজাতির পাখির আবাস্থল। অবাক করার মতো তথ্য হলো- দেশটিতে ১ লাখ প্রকার বিভিন্ন পোকামাকড় আছে। এসবের বেশিরভাগ বাস করে ব্রাজিলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বনে বা জঙ্গলে। তবে, অনেক প্রজাতি পাম্পাস ও সেমিডিসার্ট অঞ্চলেও বাস করে।

ব্রাজিলের মধ্য-পশ্চিম অংশে সমতল ও জলাভূমি এলাকা আছে। তোমাদের জানিয়ে রাখা ভালো, দেশটির এই অংশ প্যান্টানাল নামে পরিচিত। প্লাবিত উপহ্রদ এবং ছোট দ্বীপের এই প্যাচওয়ার্কটি বিশ্বের বৃহত্তম জলাভূমি। এখানে বাস করে দৈত্যাকার অ্যানাকোন্ডা, বিশাল গিনিপিগের গোত্রীয় ক্যাপিবারাস এবং হিংস্র দক্ষিণ আমেরিকান অ্যালিগেটর কাইম্যান।

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ব্রাজিলের বন ধ্বংস করে আসছে। প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে ইউরোপীয়রা আসার পর থেকে বন ধ্বংসের ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিলের আটলান্টিক রেইন ফরেস্টের অধিকাংশ শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া, প্রতি বছর আমাজনের বিশাল অংশ হারিয়ে যাচ্ছে।

সরকার ও অর্থনীতি

ব্রাজিল একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। দেশটির সরকার ব্যবস্থায় একজন প্রেসিডেন্ট, জাতীয় কংগ্রেস ও বিচার বিভাগ আছে। ১৮৮৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশটি গণতন্ত্রের সঙ্গে লড়াই করেছে। কিন্তু, ১৯৮৫ সালে সামরিক সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে অপসারণ করা হয় এবং ১৯৯৫ সালের মধ্যে ব্রাজিলের রাজনীতি ও অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ব্রাজিলের নানা ধরনের মাটি ও জলবায়ু দেখা যায়। তাই এখানে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদিত হয়।। দেশটির কৃষি রপ্তানিপণ্যের মধ্যে আছে- আখ, ল্যাটেক্স, কফি, কোকো মটরশুঁটি, তুলা, সয়াবিন, চাল ও ক্রান্তীয় ফল।

ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে শিল্প-প্রধান জাতি। তারা রাসায়নিক, ইস্পাত, বিমান এবং গাড়ি উৎপাদন করে।

ইতিহাস

কিছুদিন আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এশীয়রা প্রথম ব্রাজিলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে- অন্তত ৩২ হাজার বছর আগে সেখানে মানুষ বাস করত। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, তারা সম্ভবত প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে এসেছিলেন।

পর্তুগাল ও স্পেনের নেতৃত্বে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপীয়দের মাধ্যমে ব্রাজিলের নাম বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হয়। ইউরোপীয়রা প্রথম যখন ব্রাজিল উপকূলে পৌঁছেছিলেন তখন দেশটিতে প্রায় ৩ কোটি আদিবাসী বা আমেরইন্ডিয়ানদের আবাসস্থল ছিল। বর্তমানে তাদের মাত্র ৩ লাখ অবশিষ্ট আছে। যারা মূলত ব্রাজিলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেন।

পর্তুগাল ১৫৩০ সালে ব্রাজিলে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করে। তারা উপকূল বরাবর আখের বাগান তৈরি করে এবং ব্রাজিলের হীরা ও স্বর্ণ ইউরোপে পাঠায়। এরপরই পশ্চিম আফ্রিকার মানুষদের কাজ করার জন্য ব্রাজিলে নিয়ে আসা হয়।

১৭৮৯ সালে ব্রাজিলিয়ানরা পর্তুগিজ শাসকদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, পর্তুগিজরা সেই বিদ্রোহ দমন করে। তবে, তখন থেকেই মূলত ব্রাজিলের স্বাধীনতার একটি আন্দোলন শুরু হয়। ১৮২২ সালে ব্রাজিল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পর্তুগিজ রাজারা ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেন। তখন সামরিক নেতা ও জমিদাররা পর্তুগিজ রাজাদের তাড়িয়ে দেন এবং ব্রাজিল একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

9h ago