তুরস্কের সঙ্গে ৪০ বছরের সংঘাত অবসানের ডাক কুর্দি গোষ্ঠীর

আবদুল্লাহ ওজালানের ছবি রাস্তায় কুর্দি জনতা | ছবি: রয়টার্স

তুরস্কের সঙ্গে চার দশক ধরে সংঘাতে জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) তাদের নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের আহ্বানে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং পার্টিকে বিলুপ্ত করার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।

পিকেকের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি এ খবর জানায়।

বিবৃতিতে পিকেকে তুরস্ক সরকারের প্রতি তাদের নেতা ওজালানকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে; যাতে তিনি 'নিরস্ত্রিকরণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারেন'।

ওজলান ১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কের কারাগারে বন্দি। তার সপ্তাহব্যাপী আহ্বানের পরই পিকেকে এই ঘোষণা দিয়েছে।

তুরস্ক সরকারের সহযোগী এবং কট্টর-জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপির নেতা দেবলেত বাহচেলির মধ্যস্থতায় কয়েক মাস আগে শুরু হয় এই শান্তি উদ্যোগ।

এই সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মারমারা সাগরের ইমরালি দ্বীপের কারাগারে কুর্দি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওজালান। তাকে কুর্দি স্বাধীনতাকামীরা 'আপো' নামে ডাকে।

পিকেকের বিবৃতিতে বলা হয়, 'নেতা আপোর শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের আহ্বান বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে, আমরা আজ থেকে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের ওপর আক্রমণ চালানো না হলে আমাদের বাহিনী আর কোনো সশস্ত্র পদক্ষেপ নেবে না।'

১৯৮৪ সাল থেকে চলা সংঘাত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি অঞ্চলজুড়ে বসবাস করেছে কুর্দি গোষ্ঠী। বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্য বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রে ভাগ হলেও কুর্দিরা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র পায়নি। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক—এই চারটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে তারা।

কুর্দিস ইনস্টিটিউট প্যারিসের ১০১৭ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী তিন দশমিক ছয় থেকে সাড়ে চার কোটি কুর্দি জনগণ আছে। বিবিসি জানায়, তুরস্কের আট কোটি পাঁচ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই কুর্দি।

কুর্দিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে পিকেকে। তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

পিকেকের বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে সহিংসতায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আড়াই বছরের একটি অস্ত্রবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে সহিংসতার মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুর্দি-সমর্থিত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কঠোর অবস্থানে যায় তুরস্ক সরকার। অনেক নেতাকেই গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেয়।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার কুর্দি-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেও হামলা চালাতে থাকে তুরস্ক-সমর্থিত বাহিনীগুলো। গত মাসে কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকে নির্মূল করার জন্য সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে আহ্বান জানায় তুরস্ক।

তবে ওজালানের আহ্বানের পর এসব সংঘাত থামার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তুরস্কের কুর্দি নেতারা।

তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিয়ারবাকির ও ভানে হাজারো মানুষকে বড় পর্দায় পিকেকের বিবৃতি দেখতে জড়ো হতে দেখা যায়।

তবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, শান্তি প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়িত হবে—তা এখনো জানায়নি পিকেকে বা তুরস্ক সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Green shoots in economy

Bangladesh’s economy started showing signs of a turnaround in the second quarter of the fiscal year, official statistics show, although economists caution that Trump’s tariff measures are likely to slow down the momentum.

7h ago