রেলস্টেশনে রকেট হামলায় ২২ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত: ইউক্রেন

কিয়েভের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, গতকাল বুধবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২২ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রেলগাড়ির ৫টি বগিতে আগুন ধরে যায়। ছবি: টুইটার
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রেলগাড়ির ৫টি বগিতে আগুন ধরে যায়। ছবি: টুইটার

কিয়েভের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, গতকাল বুধবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২২ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার ছিল ইউক্রেনের স্বাধীনতা অর্জনের ৩১তম বার্ষিকী। একইসঙ্গে ইউক্রেনের রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের ৬ মাসও পূর্ণ হয় গতকাল।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আজ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল সারাদিনই রুশ বোমা হামলার মধ্য দিয়ে গুরুগম্ভীর পরিবেশে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: রয়টার্স
স্বাধীনতা দিবসের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: রয়টার্স

মঙ্গলবার রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই দিবসকে ঘিরে রাশিয়ার উসকানিমূলক আচরণের বিষয়ে সতর্ক করেন। এছাড়াও একই দিনে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করে বলেন, 'তাদেরকে (রাশিয়া) কঠোর জবাব দেওয়া হবে। যত দিন যাবে আমাদের জবাব তত কঠোর ও শক্তিশালী হবে।'

হামলার বিস্তারিত

জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেওয়া ভিডিও বক্তব্যে জেলেনস্কি দাবি করেন, রুশ অধীগ্রহণকৃত দোনেৎস্ক থেকে ১৪৫ কিমি (৯০ মাইল) দূরে অবস্থিত ছোট শহর চ্যাপলিনে একটি রেলগাড়িতে রকেট আঘাত করে।  পরবর্তীতে সান্ধ্যকালীন ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, 'চ্যাপলিন আজ আমাদের দুঃখের কারণ। এ মুহূর্তে মৃতের সংখ্যা ২২ ছুঁয়েছে।'

তিনি আরও জানান, ইউক্রেন রাশিয়াকে তাদের সব কৃতকর্মের জন্য দায়ী করবে।

জেলেনস্কির সহযোগী কিরিলো তিমোশেনকো পরে জানান, রুশ বাহিনী ২ বার চ্যাপলিনে হামলা চালায়। প্রথম হামলায় এক বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে একটি বালক মারা যায়। পরবর্তীতে রেলস্টেশনে হামলা হলে ২১ জন সেখানে নিহত হন।

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রেলগাড়ির ৫টি বগিতে আগুন ধরে যায় বলে দাবি করেছেন তিমোশেনকো।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অভিযানের শুরু থেকেই বেসামরিক ব্যক্তি ও স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে মস্কো।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইটার বার্তায় এ হামলার নিন্দা জানান।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ জানান, ইউক্রেনের ছুটির দিনে রুশ সামরিক বাহিনী কিয়েভকে এড়িয়ে চলেছে এবং যুদ্ধের সম্মুখসারির শহরগুলোতে কামান হামলা চালিয়েছে।

তিনি খারকিভ, মিকোলাইভ, নিকোপোল ও দিনিপ্রোর কথা উল্লেখ করেন।

অপর উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক টুইট করেন, 'ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসে বড় আকারের হামলা।'

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইউক্রেনের পতাকার রঙে রাঙানো বেলুন বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এপি
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইউক্রেনের পতাকার রঙে রাঙানো বেলুন বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এপি

গণভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে ১৯৯১ সালের আগস্টে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। বস্তুত ইউক্রেনের স্বাধীনতার হাত ধরেই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সূচনা হয়।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সব পরিকল্পনা বাতিল করে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। তবে অসংখ্য ইউক্রেনীয় তাদের জাতীয় পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কাপড় পরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই দিবসটি পালন করেছেন।

সারা দিনে কিয়েভে অন্তত ৭ বার উড়োজাহাজ হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠলেও কোনো হামলা হয়নি।

জেলেনস্কি ও তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা সেইন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রালে মৃত যোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত এক প্রার্থনা সভায় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স
জেলেনস্কি ও তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা সেইন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রালে মৃত যোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত এক প্রার্থনা সভায় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স

জেলেনস্কি ও তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা একাদশ শতাব্দীতে নির্মিত কিয়েভের সেইন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রালে মৃত যোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত এক প্রার্থনা সভায় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের পর নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা। 

 

Comments