সৌম্য-ইমরুলের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ে হোয়াইটওয়াশ

জিম্বাবুয়ে বড় স্কোর করায় একটু লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস দিলেন না সে সুযোগ। তাদের দাপটে স্রেফ উড়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এক কোন একটা ম্যাচেও সফরকারীরা করতে পারল না লড়াই।
Bangladesh Team
জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করা ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ দল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

জিম্বাবুয়ে বড় স্কোর করায় একটু লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস দিলেন না সে সুযোগ। তাদের দাপটে স্রেফ উড়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এক কোন একটা ম্যাচেও সফরকারীরা করতে পারল না লড়াই। 

শুক্রবার ছুটির দিনে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গ্যালারি ছিল ভরপুর। তাদের পয়সা উশুল হয়েছে সৌম্য-ইমরুলের ব্যাটে। আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ের করা ২৮৬ রান বাংলাদেশ টপকে গেছে মাত্র ৩ উইকেটে হারিয়ে, খেলার জন্য তখনো পড়ে আছে ৪৭ বল। সিরিজের মাঝপথে হুট করে দলে ফেরা সৌম্য করেছেন ১১৭  আর অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা ইমরুল আউট হন ১১৫ রান করে।

এই নিয়ে বাংলাদেশের কাছে সর্বশেষ খেলা ১৩টি ওয়ানডাতেই হারল জিম্বাবুয়ে। 

রান তাড়ায় প্রথম বলেই ছন্দে থাকা লিটন দাসের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওইটুকুই যা বিপদ। বাদ বাকি সময় খেলেছেন সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে ভুলে গিয়ে নিজেরাই রান করেছেন রান বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। সেঞ্চুরি করেছেন দুজনেই। ২২০ রানের জুটিতে উলটপালট করেছেন দুই রেকর্ড। ২৮৬ রানও যেন তাতে একদম মামুলি।

শুরুতে ইমরুলই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। ১০ ওভারে দুজন মিলে মারেন ১৩টি বাউন্ডারি, যার আটটিই আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে। এতে আছে দারুণ সব কাভার ড্রাইভ, ওভার দ্য টপ শট। দলে আসা সৌম্য নামার পর থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দে। ওয়ানডেতে সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে। তারপর থেকেই ব্যর্থতার মিছিল এবং দল থেকে ছিটকে গিয়ে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার দশা। এই ম্যাচে ফিরলেন টপ অর্ডারে মধুর লড়াই জমিয়ে।

এশিয়া কাপের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজেও তাকে ফেরানো হয় মাঝপথে। এরমধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেয়েছেন প্রচুর। শন উইলিয়ামসের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে  যেভাবে ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছেন তাতে দেখা মিলেছে সেই পুরনো সৌম্য।  সুন্দর, রাজসিক। শুরুতে আগ্রাসী থাকা ইমরুলকে ক্রমশই ছাপিয়ে গেছেন সৌম্য। অনেকটা পিছিয়ে পড়েও ঝড় তুলে তাকে ছাড়িয়ে যান তিনি। একটা সময় কে আগে সেঞ্চুরি করবেন তাই নিয়েই যেন তখন প্রতিযোগিতা। তাতে জিতেছেন সৌম্যই। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলেছেন ৮১ বলে। ৫৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করা সৌম্য পরের ৫০ রান করেছেন মাত্র ২৭ বলে। সেঞ্চুরির পর হতে চেয়েছিলেন আরও বেপরোয়া। ছক্কা মারার নেশায় থামতে হয় তাকে। ৯২ বলে ১১৭ রানের ইনিংস সৌম্য মেরেছেন ৯ চার আর হাফ ডজন ছক্কা।

আগের ম্যাচে ৯০ রানের আত্মাহুতি দেওয়া ইমরুল এদিন আর ভুল করেননি। ৯৯ বলে তুলে ফেলেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। সিরিজটা তার জন্য যেন সোনায় মোড়ানো। প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ১৪৪, পরেরটি ৯০ আর আজ করলেন ১১৫ । তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানের বাবর আজমের ৩৬০ রানের পরেই ৩৪৯ রান এখন ইমরুলের। 

এর আগে টস হেরে আবার জিম্বাবুয়েকে ব্যাট করতে দেন মাশরাফি মর্তুজা। নড়েচড়ে বসার আগেই জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার নেই। স্কোর বোর্ড রান মাত্র ৬। এরপরের চার ওভারে আর এক রানও এল না। শুরুর বিপর্যয়ের পর এভাবেই থমকে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের ইনিংস।  তারা অল্পতেই শেষ হয়ে যায় কিনা, এই আলোচনাও তখন তুঙ্গে। সেই আলাপ হাওয়া হয়েছে ব্র্যান্ডন টেইলর আর শন উইলিয়ামসের ব্যাটে। টেইলর ৭৫ রানে ফিরলেও উইলিয়ামস পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি। তবে স্লগ ওভারে ৪০ রান করা সিকান্দার রাজা আউট হলে তিনশো ছাড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। শিশিরে সিক্ত মাঠে ওই রান নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে: ২৮৬/৫ (৫০)  (মাসাকাদজা ২, ঝুয়াও ০, টেইলর ৭৫,  উইলিয়ামস ১২৯*,   রাজা ৪০, মুর ২৮ , চিকুম্বুরা  ১* ;  আবু হায়দার ১/৩৯,  সাইফুদ্দিন ১/৫১ , আরিফুল ০/১৭, মাশরাফি ০/৫৬ , সৌম্য ০/১৬, নাজমুল ২/৫৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৪০ )

বাংলাদেশ:  ২৮৮/৩ (৪২.১)  (লিটন ০, ইমরুল ১১৫, সৌম্য ১১৭, মুশফিক ২৮* , মিঠুন ৭*,     ; জার্ভিস ১/৪৭, নাগারাভা ১/৪৪, ট্রিপানো ০/৩৩, রাজা ০/৪৭, ওয়েলিংটন ১/৭১, মাসাকাদজা, উইলিয়ামস ০/৪৩, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১/৩)

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সৌম্য সরকার। 

সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-০ তে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য সিরিজ: ইমরুল কায়েস। 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago