‘আমার কান্না কেউ শুনলো না’

Moulvibazar child
২৮ অক্টোবর ২০১৮, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় চলমান পরিবহন ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের প্রতিরোধে উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দগ্রাম এলাকায় আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় এক শিশু। ছবি: সংগৃহীত

সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে গতকাল (২৮ অক্টোবর) সারাদেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধের গাড়ি, বিদেশ যাত্রী, পরীক্ষার্থীদের যানবাহনসহ কোনো প্রকারের গাড়িকে ছাড় দেননি পরিবহন শ্রমিকরা। আর তারই বলি হতে হয় মৌলভীবাজারের বড়লেখার সাতদিন বয়সী এক কন্যাশিশুকে।

মৃত শিশুটির বাবা বড়লেখা সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়া বলেন, “গতকাল অনেক চেষ্টা করেও কাউকে বুঝাতে পারলাম না। বড় কষ্ট পেয়েছি। গতকালের সময়টি মনে পড়লে মনে হয়- আমার কান্না কেউ শুনলো না। আমি সেই সময় অসহায় ছিলাম, নিরুপায় ছিলাম।”

মাত্র সাতদিন আগে সন্তানের জন্ম হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, এখনো তার নাম রাখা হয়নি। “অথচ তার মৃত্যু দেখতে হলো তা ভাবতে কষ্ট হয়,” বলেই কাঁদতে শুরু করেন তিনি।

এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এখন আর মামলা করে কি হবে? সন্তানকে তো আর ফিরে পাবো না?”

শিশুর পরিবার থেকে জানা যায়, গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিরোধে উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দগ্রাম এলাকায় আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় শিশুটি।

তারা জানান, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার সাতদিনের শিশুকন্যাকে অসুস্থ অবস্থায় ২৮ অক্টোবর সকালে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে অভিভাবকরা অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।

মৃত শিশুর চাচা আকবর আলী ওরফে ফুলু মিয়া জানান, প্রথমে দাসেরবাজারে গাড়ি আটকে চালককে মারধর করা হয়। পরে অনুরোধ করলে গাড়ি ছাড়ে। চান্দগ্রামে আবার গাড়ি আটকে গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। এছাড়াও, ৫০০ টাকা দাবি করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখে শ্রমিকেরা। দুপুর দেড়টার দিকে গাড়ি ছাড়া পেলে শিশুটিকে পাশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জসীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “একটি শিশু মারা যাওয়ার কথা লোকজন বলাবলি করছে। সিলেটে যাওয়ার পথে রাস্তায় আটকা পড়ে মারা গেছে- এরকম কথা উঠেছে। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Comments

The Daily Star  | English

Türk concerned over changes in Bangladesh's legislation banning activities of parties

"This [the changes in legislation] unduly restricts the freedoms of association, expression, and assembly," says the UN high commissioner for human rights

56m ago