তাদের মন পড়ে আছে সিলেটে

৫ নভেম্বর জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামবেন রাজিন সালেহ। এটা নিয়ে এমনিতেই তিনি আবেগাক্রান্ত। সঙ্গে যোগ হয়েছে আফসোস। এর দুদিন আগে নিজ শহর সিলেট ভেন্যুর হবে টেস্ট অভিষেক। আমন্ত্রণ পেয়েও যে সেখানে থাকা হচ্ছে না তার। আসতে পারছেন না অলক কাপালীও। সামনের ব্যস্ত মৌসুমের জন্যে ফিটনেস ধরে রাখতে জাতীয় লিগের ম্যাচটা যে তার খেলা চাই। একই অবস্থা এনামুল হক জুনিয়রের। তাপস বৈশ্যের অবশ্য আসার উপায়-ই নেই। তিনি পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর মার্কিন মুল্লুকে।

৫ নভেম্বর কক্সবাজারে জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামবেন রাজিন সালেহ। এই নিয়ে এমনিতেই তিনি আবেগাক্রান্ত। ওই ম্যাচ নিয়েই থাকার কথা ফোকাস। আগের রাউন্ড খেলে ছিলেন কক্সবাজারেই। কিন্তু  এর দুদিন আগে নিজ শহর সিলেটের অভিষেক টেস্ট শুরু হবে। আমন্ত্রণ পেয়েও ভেবেছিলেন হয়ত আসতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত আর মনকে বোঝাতে পারলেন না। এনামুল হক জুনিয়রকে নিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানে আসছেন তিনি। তবে আফসোস থেকে যাচ্ছে অলক কাপালী, তাপস বৈশ্যদের। 

সামনের ব্যস্ত মৌসুমের জন্যে ফিটনেস ধরে রাখতে জাতীয় লিগের ম্যাচটা অলকের খেলা চাই। এছাড়া পিঠের ব্যথায় ভোগায় বাড়তি ভ্রমনের ঝক্কি নিতে পারছেন না তিনি। তাপস বৈশ্যের অবশ্য আসার উপায়-ই নেই। তিনি পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর মার্কিন মুল্লুকে।

সিলেট থেকে উঠে গিয়ে টেস্ট খেলা দুজন ক্রিকেটার থাকবেন অভিষেক টেস্টে। বাকিরা  দূর থেকেই দেখবেন নিজ শহরের ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্ট। স্থানীয় আয়োজকরা অভিজাত সংস্করণের প্রবেশের মুহূর্ত রাঙাতে ব্যবস্থা রেখেছেন ‘দ্য ফাইভ মিনিটস বেল’ বা টেস্ট ঘণ্টার। 

জাতীয় লিগ খেলতে কক্সবাজারে থাকা রাজিন আর অলকের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। দুজনেই সিলেটের টেস্ট অভিষেক নিয়ে রোমাঞ্চিত। তবে তাদের কণ্ঠে টের পাওয়া গেল বিষাদও। দেশের হয়ে ২৪ টেস্ট খেলা রাজিন যেমন নিজেদের অপূর্ণতা পূরণের পথ দেখছেন টেস্ট দলে থাকা আরও দুজন আবু জায়েদ রাহি ও খালেদ আহমেদের মাধ্যমে, ‘সিলেটে টেস্ট হচ্ছে, অবশ্যই আমি গর্ববোধ করি। সিলেটে টেস্ট ভেন্যু হওয়ার মতোই একটা গ্রাউন্ড ছিল। অবশেষে টেস্ট হচ্ছে, এটা আনন্দের বিষয়। কিন্তু আমাদেরও স্বপ্ন ছিল একদিন নিজ শহরে খেলব, সেটা হয়নি, আমাদের শেষ সময় চলে আসছে। তবে সিলেটের যে দুজন খেলোয়াড় আছে টেস্ট দলে। তারা যদি খেলে তাহলে এরমধ্য দিয়েই আমরা খুশি  হতে পারি। ’

টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন অলক। তার ব্যাটেও এক সময় বাংলাদেশ দেখত বড় কিছুর আশা। অপূর্ণতায় শেষ হওয়া ক্যারিয়ারে খেদ বাড়িয়েছে নিজ মাঠে টেস্ট খেলতে না পারাও, ‘অনুভূতি অবশ্যই ভাল। তবে ইচ্ছা ছিল এই মাঠে কোন একদিন টেস্ট খেলব। কিন্তু খেলতে পারছি না, যেহেতু বর্তমান দল অনেক ভাল খেলছে।’ কিছুক্ষণ থেমে গিয়েই বললেন, ‘সিলেটের অভিষেক টেস্টটা যদি বাংলাদেশ জিততে পারে তাহলে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

খেলতে না পারুন, সম্মাননা স্মারক নিতে তো আসতে পারতেন। বাস্তবতা যে কত কঠিন অলকই শোনালেন তা, ‘৩ তারিখ সিলেট গিয়ে আবার ৫ তারিখের ভেতর কক্সবাজার ফেরা বেশ কঠিন হয়ে যায়। সামনে বিসিএল, বিপিএল আছে। খেলা ছাড়াও থাকা যাবে না।’

সিলেট-কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেয়াল তুলে দিচ্ছিল। কিন্তু মন যে মানছে না। রাজিন আর এনামুল শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করে ঠিক করেছেন যাইহোক আসবেন তারা। 

তবে যার আসার কোন বাস্তবতা নেই ক্ষুদেবার্তায় কথা হয় সেই তাপস বৈশ্যর সঙ্গেও। তার কাছে নিজের না পাওয়া, আফসোস লুকিয়ে রাখাই পেশাদারিত্ব, ‘আফসোস কেন থাকবে। শুভ কামনা জানাই দলকে। টেস্ট ম্যাচ হবে সিলেট মাঠে, একজন সিলেটী হিসেবে খুবই খুশির খবর। উঠতি খেলোয়াড়দের জন্য এটা দারুণ সুযোগ। তারা এখন বড় তারকাদের কাছ থেকে দেখতে পারবে। ওদের মতো হওয়ার স্বপ্ন বুনতে পারবে।’

সিলেট বিভাগে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বপ্রথম টেস্ট খেলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। দেশের হয়ে টেস্টে প্রথম বলটাই করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বেড়ে উঠা সব ঢাকায়। হবিগঞ্জের পেসার নাজমুল হোসেন ছিলেন বিকেএসপির ছাত্র। আর আবুল হাসান রাজু মৌলভীবাজারে খেলে এগিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।

সিলেট শহর থেকে উঠে যাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে তাই প্রথম ২০০২ সালে একসঙ্গে টেস্ট অভিষেক হয় অলক কাপালী ও তাপস বৈশ্যের। তার এক বছর পর সাদা পোশাক গায়ে চাপান রাজিন সালেহ আর এনামুল হক জুনিয়র।  এক সময় তাদের সবাইকেই নিয়মিত দেখা যেত বাংলাদেশ জাতীয় দলে।

তাপস খেলা ছেড়ে পরিবার সমেত পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশ বিভূঁইয়ে। রাজিন খেলা ছাড়ার একদম দ্বারপ্রান্তে। অলক, এনামুলরা জাতীয় দল থেকে যোজন যোজন দূরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় না বললেও ‘বিদায়’ যে তাদের থেকে দূরে নেই টের পাচ্ছেন নিজেরাও।

রাজিন, অলকদের রেখে যাওয়া ব্যাটল ধরে ফেলেছেন রাহি, খালেদরা। নিয়মিতই ঘরের মাঠে টেস্টে নামার সুযোগ তাদের সামনে। রাজিনের কথা মতই, এই তরুণদের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়েই হয়ত থাকবেন তারাও।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago