অন্ধকার কাটানোর অপেক্ষা
সিলেটের আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ। সাড়ে তিনটা থেকেই কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে চলছিল খেলা। কিন্তু সাড়ে চারটার দিকে অন্ধকার আরও ঘন হলো। দুই আম্পায়ার আলো মেপে দেখলেন আর খেলার অবস্থা নেই। দিনের খেলা শেষ হলো ২৫ মিনিট আগেই। আলো অন্ধকারের এমন উঠানামা দিনভরই চলেছে। বেশিরভাগই সময় অবশ্যই আকাশ ছিল গুমোট, মাঝে মাঝে ঝিলিক দিয়েছে রোদ্দুর। এই টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থাও যেন তাই। অন্ধকার কাটিয়ে জিততে হলে বাংলাদেশকে যে পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ।
সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দিনের বেশিরভাগ সময়েই ব্যাট করেছে জিম্বাবুয়ে। ১৮১ রান তুলে বাংলাদেশকে লক্ষ্য দিয়েছে ৩২১ রানের। রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে আলোক-স্বল্পতায় খেলা শেষ হওয়ার আগে দুই ওপেনার অবিচ্ছিন্ন থেকে তুলেছেন ২৫ রান। মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা আগে। জেতার জন্য বাংলাদেশের চাই আরও ২৯৫ রান। জিম্বাবুয়ের দরকার ১০ উইকেট।
আগের রাতের বৃষ্টির কারণে সকালে খেলা দেরিতে শুরু হওয়ার শঙ্কা ছিল। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সে শঙ্কা সত্যি হয়নি। তবে সত্যি হলো আরেক শঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানের লিড পাওয়া জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তা বাড়িয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জই দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের যা কিছু সাফল্য সব তাইজুল ইসলামকে ঘিরে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথমবার নিলেন ১০ উইকেট। উইকেট থেকেও এদিন পেয়েছেন কিছুটা সুবিধা। তাই আরও ধারালো হয়েছে বোলিং। এবার ৫ উইকেট পেতে খরচ করতে হয়েছে ৬২ রান। কিন্তু ঠিক প্রানখোলে আনন্দ করার অবস্থা কই তাইজুলের।
সকালে দেখেশুনেই শুরু করে জিম্বাবুয়ে। উইকেট হারায়নি প্রথম এক ঘণ্টায়। মেঘলা আকাশ থাকলেও বাংলাদেশ যে নেমেছে এক পেসার নিয়ে। আবু জায়েদ রাহির বলে ক্যাচও উঠেছিল। কিন্তু আরেক প্রান্ত থেকে তখন চাপ তৈরি করার যে কেউ নেই। বেলা বাড়তে মঞ্চে এসেছেন স্পিনাররা। উইকেট তুলেছেন তারাই। কিন্তু তৃতীয় দিনেও খুব বেশি টার্ন ছিল না উইকেটে। দু’একটা বল আচমকা লাফিয়েছে বটে, তবে কখনোই সিলেটের পিচ ছিল না ব্যাট করার জন্য দুরূহ। দিন শেষে দুদলই এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে তা।
উইকেটের ভাষা বুঝে নিয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা তার দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন ভালোভাবেই। লাঞ্চের আগে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ৯০ রান তুলে ফেলে তারা। মন্থর গতিতে রান উঠার টেস্টে এক সেশনে এটাই সর্বোচ্চ।
লাঞ্চের পর অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই মেহেদী হাসান মিরাজের ফাঁদে এলবডব্লিও হয়ে কাটা পড়েন মাসাকাদজা। টেইলর, উইলিয়ামস, রাজারা উইকেটে সেট হয়েও টানতে পারেননি দলকে। জিম্বাবুয়ে তাই বাংলাদেশের কাজটা নিয়ে যেতে পারেনি একদম অসম্ভবের কাছে নিয়ে যেতে পারেনি।
তবে আগের দিন তাইজুল বলেছিলেন দল চায় জিম্বাবুয়েকে ১৫০ রানের ভেতর আটকাতে। তা হয়নি। জিম্বাবুয়ে করেছে আরও ৩১ রান বেশি।
চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। রেকর্ড গড়ে জিতে গেলে আড়ালে পড়ে যাবে প্রথম ইনিংসের নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। আর না পারলে বেরিয়ে আসবে অনেকগুলো প্রশ্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
তৃতীয় দিন শেষে
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৮২/১০ ( ওভার ১১৭.৩) মাসাকাদজা ৫২ , চারি ১৩, টেইলর ৬, উইলিয়ামস ৮৮, রাজা ১৯, মুর ৬৩* , চাকাবা ২৮, ওয়েলিংটন ৪, মাভুটা ৩, জার্ভিস ৪, চাতারা ০ ; জায়েদ ১/৬৮, তাইজুল ৬/১০৮, আরিফুল ০/৭, মিরাজ ০/৪৫, নাজমুল ২/৪৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৩ )
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৩/১০ (ওভার ৫১) (লিটন ৯, ইমরুল ৫, মুমিনুল ১১ , নাজমুল ৫, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ৩১, আরিফুল ৪১*, মিরাজ ২১, তাইজুল ৮, নাজমুল ৪, আবু জায়েদ ০; জার্ভিস ২/২৮, চাতারা ৩/১৯, মাভুটা ০/২৭, রাজা ৩/৩৫, ওয়েলিংটন ০/২১, উইলিয়ামস ১/৫ )
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ১৮১/১০ (ওভার ৬৫.৩) (মাসাকাদজা ব্যাটিং ৪৮ , চারি ৪, টেইলর ২৪, উইলিয়ামস ২০, রাজা, ২৫, মুর ০, চাকাবা ২০ , ওয়েলিংটন ১৭, মাভুটা ৬, জার্ভিস ১*, চাতারা ৮ ; তাইজুল ৫/৬২, নাজমুল ২/২৭, আবু জায়েদ ০/২৫, মিরাজ ৩/৪৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৭, মুমিনুল ০/৪ )
বাংলাদেশে ২৫/০ (লক্ষ্য ৩২১) (৯.৫ ওভার) (লিটন ব্যাটিং ১৩, ইমরুল ব্যাটিং ১২ ; জার্ভিস ০/১১, চাতারা ০/১৪)
Comments