তাই বলে জিম্বাবুয়ের কাছেও সাড়ে তিনদিনে হার!

Mahmudullah
আউট হয়ে হতাশা ঝাড়ছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

উইকেটে ছিল না আহামরি টার্ন, ছিল না আচমকা বাউন্স। চতুর্থ দিনেও ব্যাট করার জন্য বেশ সহজ উইকেটেও কার আগে কে আউট হবেন এই প্রতিযোগিতা চালিয়েছেন  বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। জেতার কথা দূরে থাক নূন্যতম লড়াইও আসেনি কারো ব্যাট থেকে। সিলেটের মেঘলা দুপুর বাংলাদেশের বেহাল দশায় হয়েছে আরও নিকষ কালো। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে জড়ো হওয়া কয়েকহাজার দর্শক বাড়ি ফিরেছেন রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টের মঞ্চে স্বাগতিকদের ১৫১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে রাঙিয়েছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে।  ৩২১ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৬৯ রানে । এই নিয়ে টানা আট টেস্ট ইনিংসে দুশো করতে পারল না বাংলাদেশ। এরমধ্যে দেড়শো পেরিয়েছে দুবার।

মাত্র কদিন আগেই রঙিন পোশাকে স্বাগতিকদের সঙ্গে গুঁড়িয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ তে।

১৭ বছর বাংলাদেশের মাটিতে কোন টেস্ট জেতায় জিম্বাবুয়ের নায়ক বেশ কয়েকজনই। দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে দেন অফ স্পিনার সিকান্দার রাজা আর লেগ স্পিনার ব্র্যান্ডন মাভুটা। ৪১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন রাজা। ২১ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন মাভুটা। তবে প্রথম ইনিংসের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন শন উইলিয়ামস।

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তিনশোর বেশি রান তাড়া করে জেতা ভীষণ কঠিন। এই বাস্তবতা জানত সবাই। কিন্তু যে কারণে সেই বাস্তবতার ভাবনা তার দরকার হয়নি বাংলাদেশের কাবু হতে। কোন ভীতিকর টার্ন বা আচমকা লাফানোতে উইকেট খুয়ায়নি বাংলাদেশ। আরও একবার ব্যাটসম্যানরা ডুবেছেন উচ্চ বিলাসী শটের তাড়নায়।

টেস্টের চতুর্থ দিনে এসে উইকেট স্পিনারদের সহায়তা দিবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু সেটা ছিল একদম সহনীয় পর্যায়ের।  মনঃসংযোগ, একাগ্রতা, একটু নিবেদন থাকলেই টিকে থাকা যেত। সেটাই দেখা গেল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে বেরুতে পারেননি কেউই। জিম্বাবুয়ের বোলারদের উইকেট পেতে তেমন খাটুনি করতে হয়নি। উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিলে প্রথম সেশনেই নেই ৫ উইকেট। তখনই ম্যাচের গতিপথ মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়। লাঞ্চের পর আর চা-বিরতি পর্যন্তও টানতে পারেনি বাংলাদেশ। দুইটা বাজার ১৫ মিনিট আগেই খেলা শেষ। অর্থাৎ বাংলাদেশ হেরেছে প্রায় দেড় দিন বাকি থাকতে।  

শুরুটা লিটন দাসকে দিয়ে। সকালে কয়েকওভার ছিলেন স্বচ্ছন্দ। ২২ রানে গিয়েই কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে গেলেন। শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বাঁচলেন, ১ রান পরই চাপ সরাতে স্টাম্পের বল পুল করতে গিয়েছিলেন। লাইন মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিও। শুরুতে আম্পায়ার ‘না’ বললেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় জিম্বাবুয়ে।

আগের দিন ডমিনো এফেক্ট নিয়ে ভাবনার কথা বলেছিলেন কোচ স্টিভ রোডস। সেটা ধরা দিল এবারও। এক উইকেট ডেকে আনে আরেকটি। সমুদ্রে লাইন ধরে ঝাঁপ দিয়ে মরার বাসনা দেখা গেছে আরেকবার।

লিটনের উইকেটের রেশ না যেতেই মুমিনুল। কাইল জার্ভিসকে না খেলতে গেলেন, না ছাড়তে গেলেন- এমন দ্বিধায় প্লেইড অন হয়ে ফেরেন দুই অঙ্কের আগেই।

সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ইমরুল কায়েস, সবচেয়ে কুৎসিত ব্যাটিংও করেছেন তিনিই। জিম্বাবুয়ের ফিল্ডিং ভাল হলে অন্তত তিনবার আউট হতে পারতেন এই ওপেনার। নড়বড়ে ইমরুল ধুঁকতে ধুঁকতে এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। গত ১৭ ইনিংসেও যার দেখা পাননি তিনি। কিন্তু রাজাকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্টাম্প ফাঁকা রাখায় তাও হলো না।

টেস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ প্রথম ইনিংসের মতো আরেকটি ‘নাথিং শটে’ শেষ করেন ১৬ রানের সংগ্রাম। গত ৮ ইনিংসের একবারও কুড়ি পেরুতে না পারায় তার টেস্ট দলে জায়গাও হয়েছে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। ম্যাচ শেষে বলেছেন, এমন ব্যাটিংয়ের কোন ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। কিন্তু বাংলাদেশের কঙ্কাল বের হয়ে যাওয়া টেস্ট ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যাটা যে বড্ড জরুরী। 

নাজমুল হোসেন শান্তর সামনে সুযোগ ছিল নিজেকে মেলে ধরার। লেগ স্পিনার ব্র্যান্ডন মাভুটার নিরীহ বল মারবেন না ছাড়বেন করে করে ক্যাচ দিয়েছেন পয়েন্টে। মুশফিকুর রহিম পারতেন প্রতিরোধ গড়তে। লড়াই জমিয়ে অন্তত পরের টেস্টের জন্য যোগাড় করতে পারতেন আত্মবিশ্বাস। ব্যাখ্যাতীত আত্মঘাতী স্লগ সুইপে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেছেন তিনিও।

উইকেট পতনের বর্ণনা দিতে গেলেই হয়ত কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি বাজে তার প্রতিযোগিতাই চলবে। এসবের ভিড়ে প্রথম ইনিংসের মতো আরিফুল হক দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট করছেন দলের চাহিদা মেনে। এবারও সঙ্গীর অভাবে বড় হয়নি ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনিই। তবে ততক্ষণে আর কোন সমীকরণ বাংলাদেশের আয়ত্তে ছিল না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস:  ২৮২

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৩

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস:   ১৮১

বাংলাদেশে:  ১৬৯/১০ (৬৩.১) (লক্ষ্য ৩২১)  (লিটন ২৩, ইমরুল ৪৩ , মুমিনুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শান্ত ১৩, মুশফিক ১৩, আরিফুল ৩৮, মিরাজ  ৭, তাইজুল ০, নাজমুল ০,  আবু জায়েদ  ০*;  জার্ভিস ১/২৯, চাতারা ০/২৫, রাজা ৩/৪১, উইলিয়ামস ০/১৩, মাভুটা ৪/২১, ওয়েলিংটন ১/৩৩ )

ফল: জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শেন উইলিয়মস 

Comments

The Daily Star  | English
How artistes flamed cultural defiance in July

How artistes flamed cultural defiance in July

From stage to street, artistes and activists led a cultural revolt against brutality and censorship

7h ago