‘দাবি না মানা হলে সরকার পতনের আন্দোলন’

যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য মেনে না নেওয়া হয় তাহলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বিরোধী এই রাজনৈতিক জোটের পক্ষ থেকে।
Jatiya Oikyafront
৬ নভেম্বর ২০১৮, রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে নেতারা। ছবি: মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা

যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য মেনে না নেওয়া হয় তাহলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বিরোধী এই রাজনৈতিক জোটের পক্ষ থেকে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ (৬ অক্টোবর) ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে- পদত্যাগ করুন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত করার জন্যে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরামর্শও দেন তারা।

ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ (৬ অক্টোবর) সমাবেশে বলেন, “দাবি না মানা হলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে উৎখাত করবো।”

এছাড়াও, আগামীকাল (৭ নভেম্বর) সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ ব্যর্থ হলে পরের দিন রাজশাহীর উদ্দেশে রোডমার্চ এবং ৯ নভেম্বর সেখানে জনসমাবেশ আয়োজন করা হবে বলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংলাপ ব্যর্থ হলে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে পদযাত্রারও হুমকি দেন মির্জা ফখরুল। তবে তিনি এর জন্যে কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি।

ঐক্যফ্রন্টের অপর নেতা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-রব)-এর নেতা আ স ম আবদুর রব দ্রুত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন যাতে বিএনপি প্রধান নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি।

কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাধ্য করা হবে বলেও তিনি হুমকি দেন।

এর আগে সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যদি ভোটকেন্দ্রে যান তাহলে তারা (সরকার) ভোটে কারচুপি করতে পারবে না।”

অপর নেতা সুলতাম মনসুর সতর্ক করে বলেন, সরকার যদি ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি মেনে না নেয় তাহলে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে।

সিলেট ও চট্টগ্রামের পর ঢাকায় আয়োজিত ঐক্যফ্রন্টের তৃতীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে জোটের বিভিন্ন দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক যোগ দেন।

Jatiya Oikyafront rally
৬ নভেম্বর ২০১৮, রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দেন জোটের বিভিন্ন দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। ছবি: পলাশ খান

কেমন করে গড়ে উঠলো ঐক্যফ্রন্ট?

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু-অবাধ করার জন্যে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তিনটি দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। এর সঙ্গে বিএনপি যোগ দিলে জন্ম হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার অন্য দুটি দল হলো আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য।

এরপর, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।

ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

২. নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া।

৬. নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাঁদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago