পুতিনের সক্ষম রাশিয়া, ট্রাম্পের দুর্বল আমেরিকা

দুটি দেশকে কেন্দ্র করে পুরো পৃথিবী দুভাগে বিভক্ত ছিলো, যখন অস্তিত্ব ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের। মিখাইল গর্ভাচেভের হাত দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে পৃথিবীর একক মোড়ল হয়ে উঠে আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল শক্তি নিয়ে রাশিয়া থাকলেও, দুর্বল নেতৃত্ব ও আর্থিক সঙ্কটে দেশটি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারছিলো না দীর্ঘদিন।
yuri dolgoruky submarine
রাশিয়ার ইউরি দলগোরুকি ডুবোজাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

দুটি দেশকে কেন্দ্র করে পুরো পৃথিবী দুভাগে বিভক্ত ছিলো, যখন অস্তিত্ব ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের। মিখাইল গর্ভাচেভের হাত দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে পৃথিবীর একক মোড়ল হয়ে উঠে আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল শক্তি নিয়ে রাশিয়া থাকলেও, দুর্বল নেতৃত্ব ও আর্থিক সঙ্কটে দেশটি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারছিলো না দীর্ঘদিন।

অবস্থা অনেকটাই বদলে দিয়েছেন সাবেক কেজিবি গোয়েন্দা ভ্লাদিমির পুতিন। এখন প্রতি পদে পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা পুতিন জামানায় এতোটাই বেড়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলও তারা উলোট-পালট করে দিতে পারছে। শক্তিশালী আমেরিকার সামনে বারবার স্বদর্পে হাজির হচ্ছে রাশিয়া।

নেভিটাইমসের এক খবরে বলা হয়, গত ৫ নভেম্বর কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি পরিদর্শন বিমানের খুব কাছ দিয়ে বিপদজনকভাবে উড়ে যায়। এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা।

খবরে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ইপি৩ই অ্যারিস২ পরিদর্শন বিমানটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমা দিয়ে যখন উড়ে যাচ্ছিলো তখন রাশিয়ার সু-২৭ যুদ্ধবিমান তার গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে। মার্কিন নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, পরিদর্শন বিমানের চালক ও ক্রুদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে দ্রুত গতিতে বিমানটির পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিলো রুশ যুদ্ধবিমান।

রুশ পাইলটের এমন আচরণে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ৬ষ্ঠ নৌবহর ও পেন্টাগনের কর্তাব্যক্তিরাও। মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলোর প্রতি রুশ জঙ্গিবিমানগুলোর এমন আচরণকে নিয়মিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে পেন্টাগন জানায়, আগের ঘটনাগুলোতে যে পেশাদারিত্ব বা ভদ্রতা ছিলো ৫ নভেম্বরের ঘটনায় তা ছিলো না।

আমেরিকা এবং রাশিয়া একে অপরের প্রতিপক্ষ- এ তো পুরনো কথা। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে সামরিক উত্তেজনা। রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষযত্নে তরতাজা হয়ে উঠা রুশ ভল্লুক যখন হাত-পা বিস্তারের চেষ্টা করছে, তখন প্রশ্ন জাগে- কোথায় রয়েছে রাশিয়ার সামরিক শক্তির মূল কেন্দ্র?

ইউরোপের ‘আর্মড ফোর্সেস’-এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মজুদ রয়েছে ৭,২০০ পারমাণবিক বোমা, সেখানে রাশিয়ার হাতে রয়েছে ৭,৫০০টি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় যেখানে বছরে ৬২০ বিলিয়ন ডলার সেখানে রাশিয়ার ব্যয় মাত্র ৬৬ বিলিয়ন ডলারের একটু ওপরে।

এছাড়াও, সামরিক বাহিনীর নিয়মিত সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার থেকে বেশ এগিয়ে। শুধু কি তাই, দুটি দেশের বিমান ও নৌবাহিনীর তুলনামূলক আলোচনাতেও যুক্তরাষ্ট্রের স্থান রাশিয়ার অনেক ওপরে। তারপরও, ধীরে ধীরে রাশিয়া শুধু যে প্রভাবশালীই হয়ে উঠছে তা নয়, প্রসার ঘটাছে রুশ সামরিক শক্তির।

yuri dolgoruky submarine
রাশিয়ার ইউরি দলগোরুকি ডুবোজাহাজ থেকে ছোড়া হচ্ছে আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইউরেশিয়ার দেশটি উত্তর আটলান্টিক এবং আর্টিক মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

খবরে বলা হয়, ইউরি দলগোরুকি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজটিকে রাশিয়ার সামরিক শক্তির একটি নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাগরের গভীর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ছোড়া হয় আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এরপর নড়ে চড়ে বসে পশ্চিমের দেশগুলো। বলা হয়, আগে যেসব জায়গায় রাশিয়ার বিচরণ ছিলো না এখন সেসব জায়গাতেও দেশটি শক্তির মহড়া দিচ্ছে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যখন উত্তেজনার পারদ উপরের দিকে তখন ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাশিয়ায় এমন আচরণে তারা তেমন উদ্বিগ্ন নয়। তবে স্বীকার করে নেন যে আমেরিকা এবং এর মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পথগুলোতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তার মন্তব্য, ইউরোপের বন্ধুদেশগুলোর সমুদ্রবন্দরগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ যোগাযোগের পথে রুশ ডুবোজাহাজের উপস্থিতিকে একটি হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

তবে রাশিয়ার এমন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আটলান্টিক মহাসাগরে পাঠিয়েছে তার সবচেয়ে আধুনিক পি৮ ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান। প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করে আইসল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটির সংস্কার করা হয়েছে।

ইউরোপ এবং আফ্রিকার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নৌ কমান্ডার জেমস গরডন ফুগো সিএনএন-কে বলেন, “আসলে আমরা সব সাগরের নিরাপত্তা দিতে চাই।” এর মানে, সব জায়াগাতেই প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের সেই উপস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি, চীনকে সঙ্গে নিয়ে রাশিয়া আয়োজন করেছিলো বেশ বড় সামরিক মহড়া। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও যুক্তরাষ্ট্রকে পড়তে হচ্ছে রুশ বাধার মুখে।

কিন্তু, কোথায় রয়েছে রাশিয়ার সামরিক শক্তির মূল কেন্দ্র?- এমন প্রশ্নের জবাবে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মন্তব্য, রাশিয়া তার পুরনো ইমেজ ফিরিয়ে আনার জন্যে বদলে নিচ্ছে পুরনো আমলের সামরিক সরঞ্জাম। উন্নত প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা নতুন অস্ত্রগুলোর ধার শানিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন সময়ে। আসলে তেল বিক্রির কাঁচা টাকায় তরতাজা হয়ে উঠছে রুশ ভল্লুক। তাই রাশিয়ার এই বাড়বাড়ন্তকে নিজের স্বার্থের জন্যে হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর্থিক, সামরিক সব দিক দিয়ে রাশিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পুতিনের কৌশলী, সাহসী এবং আগ্রাসী নীতির কাছে ক্রমশ যেন পিছিয়ে পড়ছে ট্রাম্পের আমেরিকা। মার্কিন অবরোধ খুব একটা বিপদে ফেলতে পারছে না পুতিনকে। সিরিয়ায় আমেরিকাকে সফল হতে দেয়নি রাশিয়া। সব দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও, ট্রাম্পের মতো দুর্বল-অস্থির অদুরদর্শী নেতৃত্ব পিছিয়ে দিচ্ছে আমেরিকাকে- এমন মন্তব্য করা যেতে পারে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিবেচনায় এনে।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago