জাপানের কাঁধে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বোঝা!

Tokyo
জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জাপানের কাঁধে পড়েছে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বোঝা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত বন্ড কেনার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবতা এমন যে, জাপান এখন বসে রয়েছে কেনা সম্পদের ওপর যা এর মোট অর্থনীতির তুলনায় বেশ ভারি।

গতকাল (১৩ নভেম্বর) ব্যাংক অব জাপানের প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, জাপানের স্থবির অর্থনীতিকে সচল করতে বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ সম্পদ সংগ্রহ করা হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৫৫৩.৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন। এটি জাপানের বার্ষিক জিডিপির চেয়ে অনেক বেশি।

কেনো হলো এমন পরিস্থিতি?

২০১৩ সালে ব্যাংক অব জাপানের গভর্নর হারুহিকো কুরোদা একটি পরিকল্পনা হাতে নেন। জাপানে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে সুদের হার সীমিত রাখার জন্যে পদক্ষেপ নেন তিনি। ফলে একটু একটু করে ব্যাংকটি কিনতে শুরু করে বন্ড। গড়ে তুলে সম্পদের পাহাড়। এখন যেনো সেই পাহাড়ের চাপেই পড়েতে যাচ্ছে সূর্যোদয়ের দেশটি।

তবে বিশ্বব্যাপী মন্দাভাবের ফলে অর্থনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যে বন্ড কেনার কাজ যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপেও নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু, জাপানের এমন পদক্ষেপ আর সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রির্জাভের মোট সম্পদ দেশটির মোট জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এমনকি, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট সম্পদ ইউরোজোনের মোট অর্থনীতির ৪০ শতাংশ। কিন্তু, জাপানের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা।

মিশ্র ফলাফল

গত দশকের স্থবিরতার পর জাপান এখন উপভোগ করছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তবে এ বছর দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে শঙ্কার ছাপ। আজ (১৪ নভেম্বর) সে দেশের সরকারের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, বার্ষিক ১.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগোলেও এ বছরের তৃতীয় ধাপে এসে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে।

জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল পরিমাণের সম্পদ কেনার চেষ্টা এবং সুদের হার সীমিত রাখার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ব্যাংক নির্ধারিত ২ শতাংশের নিচে রয়েছে মূদ্রাস্ফীতির হার। এমন পরিস্থিতিতে গভর্নর কুরোদার কথা, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত ব্যাংকটির সম্পদ আহরণের চেষ্টা চলবেই।

ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, জাপানের এমন একরোখা পদক্ষেপের ফলে দেশটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এছাড়াও, ব্যাংকের গভর্নর সম্পদ সংগ্রহের বিষয়ে যে দূরসাধ্য কাজের কথা বলছেন তাতে বেশ ঝুঁকি রয়েছে।

গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদ মার্সেল থিলিয়ান্ট বলেন, “ব্যাংক অব জাপান কী পরিমাণের সম্পদ কিনবে এর একটা সীমারেখা থাকা উচিত।” তার মতে, এই বিপুল পরিমাণের সম্পদ কেনা হয়েছে জাপানি সরকারের বন্ডের মাধ্যমে। আর এই বন্ড সরবরাহেরও সীমারেখা রয়েছে।

খবরে প্রকাশ, ইতোমধ্যে সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে ধীরস্থির ভাব দেখা যাচ্ছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে। থিলিয়ান্ট মনে করেন যে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, তবে এই ধীরস্থির ভাবের কারণ এই নয় যে সরকারের পরিকল্পনা সফল হতে যাচ্ছে। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এই দেখে যে এমন কৌশলের কারণে জাপানের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লাভ মুখ দেখতে হিমশিম খাচ্ছে।

নেতিবাচক সুদের হারের কারণে ব্যাংকগুলোর লাভের পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিপুল পরিমাণের সম্পদ কেনার ফলে বন্ডের আকর্ষণীয় বাজারেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ফলে জাপান বড় কোনো অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে সেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে নাও পেতে পারে বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মন্তব্য।

আরও পড়ুন:

ভিসা ছাড়া ১৯০টি দেশে যেতে পারেন তারা!

Comments

The Daily Star  | English

Iran announces new wave of attacks on Israel: state TV

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

1h ago