রোমাঞ্চ জমা থাকল শেষ দিনে

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কেন জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করালেন না? যদি ব্যাটিংই করবেন তাহলে আরও আগে কেন ইনিংস ছেড়ে দিলেন না, যখন কিনা লিড চারশো পেরিয়ে গেল তখনো কিসের অপেক্ষায় ছিলেন? নিজের সেঞ্চুরির? এমন সব অস্বস্তির কর প্রশ্ন বড় হচ্ছিল চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে। তবে জিম্বাবুয়ের ওপেনারদের প্রতিরোধ ভেঙে আপাতত দুই উইকেট তুলে নেওয়ার স্বস্তিতে বাংলাদেশ।
Mahmudullah & Masakadza
সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহ। পাশেই দাঁড়ানো হ্যামিল্টন মাসাকাদজারাও এখনো আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কেন জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করালেন না? যদি ব্যাটিংই করবেন তাহলে আরও আগে কেন ইনিংস ছেড়ে দিলেন না, যখন কিনা লিড চারশো পেরিয়ে গেল তখনো কিসের অপেক্ষায় ছিলেন? নিজের সেঞ্চুরির? এমন সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন বড় হচ্ছিল চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে। তবে জিম্বাবুয়ের ওপেনারদের প্রতিরোধ ভেঙে আপাতত দুই উইকেট তুলে নেওয়ার স্বস্তিতে সেসব প্রশ্ন তোলাই থাকল।

এই ম্যাচে জেতার কোন অবস্থায় নেই জিম্বাবুয়ে। ৪৪৩ রানের বিশ্বরেকর্ড তাড়া করে জেতার চেষ্টা করাও বাড়াবাড়ি। তাদের লক্ষ্য একটাই  চার সেশন ব্যাট করে খেলাটা ড্র করে ফেলা। ড্র করলে সিরিজও যে তাদেরই। ২৩ ওভার পর্যন্ত দুই ওপেনারই অবিচ্ছিন্ন থেকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শঙ্কা। দিনশেষে অবশ্য ২ উইকেট খুইয়ে ৭৬ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। রানের হিসাব বাদ দিয়ে জিম্বাবুয়ের সামনে এখন শেষ দিনের তিন সেশন টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। শেষ দিনে আরও ৩৬৭ করার দিকে পা দেওয়ার বাস্তবতা নেই মাসাকাদজাদের। জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হার এড়াতে বাংলাদেশকে নিতে হবে ওদের বাকি ৮ উইকেট।

উইকেট হয়ত পড়তে পারত আরও বেশি। ম্যাচেও আরও ভালো অবস্থানে চলে যেতে পারত বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির সময় উদযাপনে তাল মিলিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করা মেহেদী হাসান মিরাজ ফিল্ডিংয়ে নামলেন যেন হাতে মাখন মেখে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দু’দুটো ক্যাচ ফেলে দিলেন। একটি তাইজুল ইসলামের বলে। আরেকটিতে আবারও বোলার ছিলেন  ‘দুর্ভাগা’ খালেদ আহমেদ। এই নিয়ে এই টেস্টে তিনটা ক্যাচ পড়ল তার বলে।

মিরাজ বোলিংয়ে এসেই সেই অপরাধবোধ অবশ্য গুচিয়েছেন মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে। ওটাই প্রথম ব্রেক থ্রো। পরের ওভারেই আরেক ওপেনার ব্রায়ান চারিকে ফেরান তাইজুল।

চতুর্থ দিনেও মিরপুরের উইকেট একদম না খেলার মতো নেই। খুব বেশি বল লাফায়নি, টার্ন করেনি আহামরি। তবে ক্রমশই ভাঙতে থাকা উইকেটে তিন সেশন ব্যাট করা নিশ্চিতইভাবেই ভীষণ কঠিন।

সকালে জিম্বাবুয়েও হয়ত ভেবেছিল বাংলাদেশ ফলোঅনই করাবে। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের ঝুঁকি এড়াতেই নিরাপদে হাঁটেন মাহমুদউল্লাহরা। সকালের প্রথম ঘন্টায় বাংলাদেশের সেই সিদ্ধান্ত আরও বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দেন কাইল জার্ভিস, ডোনাল্ড ত্রিরিপানো। কিছু বোঝে উঠার আগেই টপ অর্ডার তছনছ। দুজনেই ভাল বল করেছেন, কিন্তু ভাল বলে উইকেট পড়েছে কেবল একটি। বাকি তিনটিই ব্যাটসম্যানদের দেওয়া ‘গিফট’। জার্ভিসের অফ স্টাম্পের  অনেক বাইরের বল পেটাতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়ে টেস্টে রান খরা আরেক ইনিংস টেনে নেন ইমরুল কায়েস। লিটন দাস অবশ্য এবার ফেরেন জার্ভিসের দারুণ ডেলিভারিতে। আগের ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম ত্রিপানোকে পেটাতে গিয়ে ছুঁড়ে দেন উইকেট। ২৮ রানেই নেই ৪ উইকেট।  বোঝার উপায় নেই জিম্বাবুয়ে খেলছে ম্যাচের মাঝপথে ছিটকে পড়া পেসার টেন্ডাই চাতারাকে ছাড়াই।

ওই অবস্থা থেকে দলের ঘুরে দাঁড়ানো মোহাম্মদ মিঠুন আর মাহমুদউল্লাহর হাত ধরে। অভিষিক্ত মিঠুন প্রথম ইনিংসে যেভাবে আউট হয়েছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তার উপর চাপ ছিল। গত ১০ ইনিংস থেকে ফিফটি না পাওয়া অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তো অবধারিতভাবেই চাপে। আর দল তো চাপেই। সব চাপ একসঙ্গে মিলেই যেন তৈরি হয় পালটা আঘাতের বারুদ। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে সাহসের সঙ্গে রান বাড়াতে থাকেন দুজন। ২১৮ রানের লিডটা দিচ্ছিল স্বস্তি। আতঙ্কিত না হয়ে তাই হাল ধরে দুজনেই সেঁটে যান উইকেটে। তাদের বাধন আলগা করা গেছে আরও ১১৮ রান যোগ করার পর। ততক্ষণে ম্যাচ অনেকটা মুঠোয় বাংলাদেশের। ৬৭ রান করা মিঠুনের আউটের পরও চালিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। লিড চারশো পেরিয়ে যাওয়ার পরও চালিয়ে গেলেন ব্যাটিং। চা বিরতির ঠিক আগের বলে প্রায় নয় বছরের অপেক্ষা গুছিয়ে টেস্টে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তোলার পরই ইনিংস ছাড়েন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

চতুর্থ দিন শেষে 

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫২২/৬ (ডিক্লে)

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস:   ৩০৪ 

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস ২২৪/৬ (ডিক্লে)

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ৪৪৩): ৭৬/২ (৩০ ওভার)  (মাসাকাদজা ২৫, চারি ৪৩, টেইলর ব্যাটিং ৪, উইলিয়ামস ব্যাটিং ২ ; মোস্তাফিজ ০/২, তাইজুল ১/৩৪, খালেদ ০/১৫, মিরাজ ১/১৬, আরিফুল ০/৭)

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago