নির্বাচন কমিশনে ১৪ দল-ঐক্যফ্রন্টের চিঠির দ্বৈরথ
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/election_0.jpg?itok=pwO0DWVe×tamp=1542095380)
নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিসহ আরও কিছু অভিযোগ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে বৃহস্পতিবার ১৩টি চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
অপরদিকে, গত কয়েক দিনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে যেসব দাবি ও অভিযোগ করা হয়েছিল, গতকাল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে তা খণ্ডন করে এসব অভিযোগকে ‘কাল্পনিক এবং মনগড়া’ আখ্যা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। জোটের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে চিঠিটি জমা দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
বিষয়টি নিয়ে আজ (২৪ নভেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই দুই নেতা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিসিএসের ১৯৮২, ১৯৮২ স্পেশাল ও ১৯৮৪ এই তিন ব্যাচের প্রায় একশোর ওপর কর্মকর্তাকে টপকে হেললুদ্দীন আহমদকে নির্বাচন কমিশন সচিব করা হয়েছে। আমরা কাগজে কলমে তা দেখিয়ে এসেছি। উনারা এসব অভিযোগকে কাল্পনিক ও মনগড়া বললেই হলো!
আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবেদন আকারে আমাদের অভিযোগগুলো জানিয়েছি। এক্ষেত্রে অসারতা থাকলে নির্বাচন কমিশনই বলে দেবে যে এগুলো ভিত্তিহীন। নির্বাচন কমিশন তাহলে পুলিশকে কেন বলছে, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীসহ কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডাকবেন না, একথা বলছেন কেন? কমিশন কেন বলছে, কেউ কোনো প্রকল্প উদ্বোধন করবেন না। এর অর্থ হচ্ছে যে, আমাদের অভিযোগের সত্যতা আছে।
আর একটি অভিযোগ ছিল, চাকুরীরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদার ৪৫ জন কর্মকর্তাকে ৪৫ জেলায় পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। পরে নির্বাচন কমিশন বলল যে, গত ১৩ নভেম্বর পরামর্শক নিয়োগের আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয় সচিব। এর অর্থ হচ্ছে, নিয়োগটি হয়েছিল কিন্তু পরে স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় যে, আমাদের অভিযোগগুলো মনগড়া বা কাল্পনিক নয় বরং তথ্যবহুল ও সুনির্দিষ্ট ।
আদালতের রায়ে দণ্ডিত ও পলাতক তারেক রহমান অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ১৪ দল বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে দেখলেও আলাল বলছেন, ‘এটা মোটেও সংবিধান পরিপন্থী নয়। কথায় কথায় যারা সংবিধান টানছেন, বর্তমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (খ) আছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী কারও কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন প্রদান করা হয়, তাহলে তিনিও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকারকে দায়মুক্তি দিয়েছিল। তখন সংবিধান কোথায় ছিল? কিন্তু, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারেকের কথা বলার অধিকারকে সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করা আমাদের বোধগম্য নয়। তাকে নিয়ে কীসের এতো আতঙ্ক? এটা ক্ষমতাসীনদের আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ। বেশি আতঙ্কে মানুষ যেমন প্রলাপ বকে, তেমনি তারা প্রলাপ বকা শুরু করেছে।
নির্বাচনী কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার নামে দেশে গৃহযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কী আর বলব। ওবায়দুল কাদের ছাত্র রাজনীতি করে আসা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ। ২০০৬ সালেও তিনি একবার বলেছিলেন, বঙ্গভবনে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। সেই জায়গা থেকে তিনি যে আরও উন্নত অবস্থানে এসেছেন, এটা বোধহয় তার খেয়াল নেই। কথা বলার আগে হিসেব করে বলা উচিত।’
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ঐক্যফ্রন্টের চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, ‘রাজনৈতিক অংশীজন হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এখতিয়ার আছে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানানোর, অভিযোগ তুলে ধরার। নির্বাচন কমিশনেরও এখতিয়ার আছে সব দলের চিঠি গ্রহণ করে সেগুলোর বিষয়বস্তু বিবেচনা করে দেখার। এর আগেও, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে তাদের নানা অভিযোগ উত্থাপন করলেও, তারা কোনো উত্তর পেতে চায় না। যথাযথ উত্তর দেওয়া হলেও তা তাদের মনোপূত হয় না। তার মানে তাদের একটি দুরভিসন্ধি আছে।
‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি চাকুরিজীবী বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মতাদর্শ থাকতেই পারে। ছাত্রাবস্থায় অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন। কিন্তু, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে সেই পরিচয় তুলে তাদের কাজ-কর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি ঠিক না। তারপরও, এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট কি না, তা যাচাইয়ের ভার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের। কী করতে হবে না হবে, তা নির্বাচন কমিশনই দেখবে। কারো ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে তারা কোনো ব্যবস্থা নিবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’
তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক দণ্ডিত এবং পলাতক আসামি। সে আমাদের কাছে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক কয়েদি গণমাধ্যমে কথা বলছেন। এই অধিকার তার নেই। এই ব্যাপারে গতকাল নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। এখন নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’
Comments