অজানা আদিবাসীরা

ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সেন্টিনালিদের হাতে এক মার্কিন যাজক নিহত হওয়ার পরে সংরক্ষিত আদিবাসীদের বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে আসে। তারা পৃথিবীর অন্য সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করে। ফলে তাদের সম্পর্কে কখনো সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায় না। তাদের জীবনযাপন, টিকে থাকা- বেঁচে থাকা নিয়ে যা জানা যায়, তার অনেকটাই ধারণাগত।
Yora tribe
ইয়োরা আদিবাসী গোষ্ঠীর এক সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সেন্টিনালিদের হাতে এক মার্কিন যাজক নিহত হওয়ার পরে সংরক্ষিত আদিবাসীদের বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে আসে। তারা পৃথিবীর অন্য সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করে। ফলে তাদের সম্পর্কে কখনো সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায় না। তাদের জীবনযাপন, টিকে থাকা- বেঁচে থাকা নিয়ে যা জানা যায়, তার অনেকটাই ধারণাগত।

ধারণা করা হয় ব্রাজিলে এমন প্রায় ১শ’ আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস। এছাড়া কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু এবং প্যারাগুয়ের উত্তরাঞ্চলেও এ ধরনের গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায়। আমেরিকার বাইরে পাপুয়া নিউ গিনিতে বিচ্ছিন্ন আদিবাসীর অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি থেকে জানা যায় তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে। তবে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।

কেননা, এরা তাদের গোষ্ঠীর বাইরের মানুষকে খুব একটা পছন্দ করে না। আদিবাসীদের বিষয়ে অধিকাংশ দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, এরা তাদের মতো যেমন আছে তেমনই থাকবে। সাধারণত এদের সঙ্গে যোগাযোগের খুব একটা চেষ্টা করা হয় না। যদিও পর্যটক এবং যাজকরা এই নিয়ম সব সময় মানতে চান না।

Guaja tribe
গুয়াজা আদিবাসী। ছবি: সংগৃহীত

গুয়াজা গোষ্ঠী

ব্রাজিলের গুয়াজা গোষ্ঠী জঙ্গলে বাস করে। তাদের মূল কাজ শিকার। যতদূর জানা যায়, গুয়াজা তাদের বলে আওয়া, এর অর্থ হলো ‘মানুষ’ বা ‘ব্যক্তি’। তাদের উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। কোনো কোনো গবেষকের মতে, অন্য কোনো ভূখণ্ড থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে তারা ব্রাজিলে আসে। তারা ব্রাজিলের যে অংশে বসবাস করে, সেই জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের ২৯ জুলাই ব্রাজিলের আইন মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়াদের জন্য ১ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমি সংরক্ষিত ঘোষণা করে।

গুয়াজা গোষ্ঠী চিন্ময়জগততত্ত্বে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, তাদের পূর্ব-পুরুষ এবং ঈশ্বর স্বর্গে বাস করেন। শুষ্ক মৌসুমের পূর্ণিমা রাতে গুয়াজা নারী-পুরুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস, এভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।

ইয়োরা গোষ্ঠী

পেরুর জঙ্গলে বাস করে ইয়োরা গোষ্ঠী। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতেই তারা বেশি পছন্দ করে। নিজেদের মতো করে বসবাস করতে তারা মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গলে চলে যায়। খুব কম গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায় যারা ধর্ম সম্পর্কে জানে। অনেকে বলে থাকেন তারা খ্রিষ্টধর্ম্বাবলী।

কাওয়াহিভা গোষ্ঠী

কাওয়াহিভাদের আগে বলা হতো রিও প্রাডো ইন্ডিয়ান্স। এরা ব্রাজিলের মাটো গ্রোসোতে বাস করে। ধারণা করা হয়, ১৯৯৯ সালে প্রথম তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে তারা। শিকার এবং খাবার সংরক্ষণ করে জীবনধারণ করে এই গোষ্ঠীর মানুষেরা। শিকারে বের হলে এরা অস্থায়ী ক্যাম্প বানিয়ে থাকে। তবে এক জায়গায় এরা বেশি দিন থাকে না।

Mashco Piro tribe
মাশকো-ফিরো আদিবাসী। ছবি: সংগৃহীত

মাশকো-ফিরো গোষ্ঠী

পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের মানু ন্যাশনাল পার্কের কাছে এই গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা যায়, পেরুর আমাজন অঞ্চলে ১৪টি গোষ্ঠীতে প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তির বাস রয়েছে। সম্প্রতি মাশকো-ফিরো গোষ্ঠীর সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘাত বাড়ছে বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।

সেন্টিনালি গোষ্ঠী

আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সেন্টিনালিরা বাস করে। ২০১১ সালের সালের ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানকার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেই পরিসংখ্যানে বলা হয়, দূর থেকে ১৫ জন সেন্টিনালিকে দেখা গিয়েছিল। ভারত মহাসাগরে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ৫৭২টি দ্বীপে মোট ছয়টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারটি হলো: গ্রেট আন্দামানিজ, অনজেস, জারাওয়া এবং সেন্টিনালিজ।

সেন্টিনালিদের গায়ের রঙ কালো। ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে তারা আন্দামানে আসে। তারা মূলত শিকারের ওপর নির্ভর করে জীবন চালায়।

Sentinalese
সেন্টিনালি আদিবাসী। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। তাদের তালিকায় রয়েছে টারোমেনান, জারাওয়াজ, জুরুরেই, ওয়েয়াম্পি, নুকাক, কারারাও, টোরোমোনা এবং পিনটুপি আদিবাসীর নাম।

আরও পড়ুন:

আন্দামানের সেন্টিনালি আদিবাসীদের হাতে প্রাণ হারালেন ‘যাজক’

Comments