চুক্তির ২১ বছর পরও ভূমিসহ মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনোটিরই সমাধান হয়নি: সন্তু লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) অভিযোগ- শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে না গিয়ে সরকার জুম্মু জাতিগোষ্ঠী এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
সংগঠনটি মনে করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমস্যা শান্তিপূর্ণ এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার জন্যে ২১ বছর আগে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হলেও এর তিন ভাগের দুই ভাগ এখনো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।
গতকাল (২৯ নভেম্বর) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিসিজেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, “তাই বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।”
তার মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জুম্মু জাতির ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর সমিতির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এমন পরিস্থিতি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের জন্যে মানানসই নয়।”
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১ বছর পূর্তির প্রাক্কালে জনসংহতি সমিতি এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। দীর্ঘ ২০ বছরের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্যে এই চুক্তি সাক্ষর করেছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।
সেসময় সরকারের পক্ষে চুক্তিতে সাক্ষর করেন তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা।
চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে- সরকারের এমন দাবির বিপরীতে সন্তু লারমার মন্তব্য, প্রকৃত সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ২৫। তিনি বলেন, সরকার চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত আইন সংশোধন করেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কোনো সাংগঠনিক রূপ পায়নি বলেও মন্তব্য করেন সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করা হলেও লোকবল ও তহবিলের অভাবে গত ২১ বছরে একটিও ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা করতে পারেনি। জুম্মু জনগোষ্ঠী তাদের হারানো ভূমি ফিরে পায়নি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শান্তি চুক্তি সাক্ষরের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্তত ২০টি সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১১টি হামলা হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে।
তার মতে, নিরাপত্তার অভাবে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাঁচশ’র বেশি জুম্মু প্রতিবেশী মিয়ানমারে চলে গেছেন।
এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং এবং অধিকারকর্মী নুমান আহমেদ খান।
Comments