‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্বের বিচারে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিতে যাচ্ছে’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) বলেছেন যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সারাদেশে কোথাও কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যদিও সারাদেশে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদলের প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দ্য ডেইলি স্টারের নজরে এসেছে।
নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণদানের ওই অনুষ্ঠানে সিইসি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।”
এ বিষয়ে আজ (৩০ নভেম্বর) ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “আমরা দেখেছি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গাড়িবহর ও মিছিল নিয়ে তার ভাইয়ের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসব দেখেও, নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।”
“এখনই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের শক্ত হাতে ধরা উচিত। নির্বাচন কমিশন তাদের তাৎক্ষণিক সতর্কবার্তা দিতে পারে, শাস্তি দিতে পারে। এতে প্রার্থীরা ভয় পেয়ে কিছুটা হলেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছে। এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব অবহেলা,” মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক এই সচিব বলেন, “এখনও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তার করছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যতোই বলা হোক না কেনো, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি তো হয়নি, সম্ভাবনাও নেই।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাজ-কারবার এতোটাই বিরক্তিকর হয়ে গেছে যে, আমি এগুলো নিয়ে এখন আর কথা বলি না এবং বলা পছন্দও করি না।”
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কয়েকদিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মূর্তির ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন তারা নিজেই যেন বোবা-অন্ধ হয়ে গেছে। শোভাযাত্রা করে মনোনয়নপত্র জমাদানে যে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে কমিশন নিজের নির্দেশিত পথেই হাঁটছে।”
তিনি বলেন, “পুলিশ এবং প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি ভুয়া মামলা ও গ্রেপ্তার ঠেকাতে পারছে না। এর মধ্য দিয়ে শুধু যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতেই ব্যর্থ হয়েছে তা নয়, কমিশন তার ক্ষমতারও অপব্যবহার করছে।”
এবারের নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্বের বিচারে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিতে যাচ্ছে বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান। তার মতে, “আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ার জন্য যদি কাউকে দায়ী করা হয়, সেটি হবে নির্বাচন কমিশন।”
Comments