লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষক আন্দোলন ধাক্কা দিচ্ছে বিজেপিকে
সিঙ্গুর থেকে কলকাতা লংমার্চ করেছে বামেরা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন, কৃষকদের আয় বেড়েছে তিন গুণ। কেন্দ্রীয় সরকার ৪২ হাজার কোটি টাকার কৃষি বান্ধব কর্মসূচি নিয়েছে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও কিছুদিন আগে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এরপরও ভারতের কৃষকরা মনে করছেন, কৃষিবান্ধব নয় দেশের সরকার। বিজেপি প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
কৃষকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলো কৃষি থেকে শিল্পের দিকে বেশি যত্নবান। এমন কি বিদেশি বিনিয়োগের ঝোঁকে দিনদিন কৃষকশ্রেণি পুঁজিবাদের হাতের পুতুল হয়ে পড়ছেন।
কৃষি ঋণ মওকুফ এবং ফসলের ন্যায্য দামের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ভারতের কৃষকরা। সেই আন্দোলনকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে আরও বেগবান করতে দিল্লিসহ ভারতের প্রায় সব রাজ্যের বামদের কৃষক সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করেছে।
গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরের টাটা ন্যানো কারখানার জমির সামনে থেকে লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করে বাম সংগঠনগুলো। দুই দিনের সেই লংমার্চ শেষ হয় কলকাতার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে স্মারকলিপি পেশের মধ্যদিয়ে।
একইভাবে দিল্লিতে কৃষকদের সংগঠনসহ ২০৭টি সংগঠনের যৌথ লংমার্চ শেষে শুক্রবার সংসদে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এর আগে রামলীলা ময়দানের আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র যাদব প্রমুখ শীর্ষ নেতৃত্ব।
কৃষকদের ওই মহাসমাবেশে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালা, মহারাষ্ট্র থেকে লক্ষ লক্ষ কৃষক যোগ দিয়েছিলেন।
কৃষকদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি। সে কারণে দেশজুড়ে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যাও বেড়েছে।
ভারতের অর্থনীতির পরিমাণ ২.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে কৃষকদের অবদান কম নয়, ১৫ শতাংশ। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম দেশও ভারত। ফলত কৃষকদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডে আঘাতের সামিল- এমনই দাবি করেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার পূর্ব-বধমানের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, আগের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের আয় বেড়েছে তিন গুণ। কৃষকদের কৃষি বিমা ছাড়াও নানা সুবিধা দিতে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা খরচ করেছে তার সরকার।
তবে বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তী উল্টো অভিযোগ করে বলেছেন, তৃণমূল সরকার মতো মিথ্যাবাদী সরকার নেই। তারা মুখে এটা বলে কাজে অন্যটা করে। এই রাজ্যে মদ পান করে মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পায় পরিবার। কিন্তু কৃষকরা না খেতে পেরে মরে যাচ্ছে, কৃষক আত্মহত্যা করছে সেখানে পাশে দাঁড়ায় না রাজ্য সরকার।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। কৃষকদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে শুধু রাজনীতির স্বার্থেই নন, এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক দলগুলো কৃষকদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের সংহতি প্রকাশ করেছে সেই রাজনৈতিক দলগুলো যেন ক্ষমতায় এলে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে সেটাও মনে করছেন তারা।
Comments