‘এতোটা অপ্রস্তুত নির্বাচন কমিশন এর আগে কখনও দেখিনি’
![Collage Collage](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/collage-1_3.jpg?itok=IAUZPVEc×tamp=1543901377)
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, গণমাধ্যমে সংবাদ-ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। সবাই দেখছেন, দেখছে না শুধু নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের এই না দেখতে পাওয়ার কারণ কী? বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সুশাসনের জন্যে নাগরিক সুজন-এর বদিউল আলম মজুমদার, ব্রতী-র শারমিন মুরশিদ এবং জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। আসলে তারা কোনো কিছু দেখতে না চাইলে, জোর করে তো আর তাদের দেখানো যাবে না। তারা বলছে, দেশের কোথাও কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি। এটা সঠিক নয়। এখন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নয়, কমিশনে সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন কী না, জনমনে এই প্রশ্ন জেগেছে। এবারের নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ- ক্রমান্বয়েই তারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদকে নারায়ণগঞ্জের নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “নির্বাচনের প্রাক্কালে বিতর্কিত ওই পুলিশ অফিসারকে বদলি করা হলো, এরপরে তো আর সন্দেহ থাকার কথা নয়। অতীতের নির্বাচন কমিশনার তাকে এক মাসের জন্য প্রত্যাহার করেছিলেন, কিন্তু গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এখন তাকে আর একটি জেলায় পদায়ন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে, নির্বাচন কমিশন যে আসলে কার স্বার্থে কাজ করছে, তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণেই হয়তো, সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের বলিষ্ঠ কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।”
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী-র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, “শুরু থেকেই কথায় ও কাজের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে গেছে যে, এসব নিয়ে এখন দেশের সব পেশাজীবী, এমনকি সাধারণ মানুষও কথা বলছে, সমালোচনা মুখর হচ্ছে। আমরাও পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হচ্ছে, প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছেন না। এসব ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা আরও বেশি অসহায় বোধ করছি।”
এবারের নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত দুর্বল উল্লেখ করে এই পর্যবেক্ষক বলেন, “এতোটা অপ্রস্তুত নির্বাচন কমিশন এর আগে কখনও দেখিনি। কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে, কমিশন নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলে, অসঙ্গতিগুলো দেখুক এবং পারলে অনিয়মগুলো থামাক।”
জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “এখন তো মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহার পর্ব চলছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের মনোযোগ বোধহয় সেদিকেই নিবদ্ধ। তারপরও এক্ষেত্রে অনেক যদি এবং কিন্তু আছে। নির্বাচন কমিশন হয়তো তার মতো করে ভাবছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছে।”
“নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। কারণ- কর্নেল অলি আহমদের গতকালের বক্তব্য যে ইঙ্গিত বহন করে, তাতে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট যেভাবে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল, বিরোধীরা যদি একই আচরণ করে তাহলে নির্বাচনের পরিস্থিতি হবে একরকম। আবার সবাই ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে হবে অন্যরকম। যাহোক, নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত দেখতে হবে, তারপর বোঝা যাবে আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাচ্ছি কী যাচ্ছি না।” বলেন নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
Comments