‘আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে’

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে ভোটগ্রহণের কাজ করবেন এমন কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে সাহসিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে।
Mahbub Talukder
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ফাইল ছবি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে ভোটগ্রহণের কাজ করবেন এমন কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে সাহসিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতি সামান্য। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাতে ইচ্ছানুযায়ী পছন্দের প্রার্থীকে ভোটটি দিতে পারেন। এই সামান্য চাওয়াই রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে।’

‘এজন্যই এই নির্বাচনকে আমরা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারি না। আপনাদের দায়িত্ববোধ নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।’

আজ সোমবার ঢাকার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন।

মাহবুব তালুকদারের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো:

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৬ দিন বাকি। নির্বাচনে আপনারা বিভিন্ন বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারচেয়ে বড় কথা আপনারা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এই দায়িত্ব যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন।

নির্বাচনের মূল দায়িত্ব পালন করেন প্রিজাইডিং অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন। সার্বিক নির্বাচনের তিনিই সঞ্চালক। ফলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও নতুন সঞ্চালক তৈরির কারিগর আপনারা। আপনারা দ্বৈত দায়িত্ব পালন করছেন বলে অত্যুক্তি হয় না। প্রথমত আপনারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কর্মক্ষমতাকে শানিত করছেন। দ্বিতীয়ত, আপনারা একটি বিরাট বাহিনীকে কর্মক্ষেত্রে শানিত করার প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন।

যে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনারা প্রশিক্ষণ নেবেন ও দেবেন, তা হলো সংবিধান পাঠ ও সংবিধানের প্রয়োজনীয় অংশ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ধারণা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন। এ ছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভূমিকা, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কেও আপনারা অবহিত হবেন। সরকারের বিভিন্ন অফিসের উপজেলা বা থানা পর্যায়ের মনোনীত প্রশিক্ষকদের সংখ্যা ২০২৬ জন। এর মধ্যে আজ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ৪০৮ জন। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু থাকবে। জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য এই প্রশিক্ষণ আপনাদের দেবে দক্ষতা ও সক্ষমতা, আপনাদের মনে যোগাবে আত্মবিশ্বাস। আপনারা নির্ভয়ে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে আপনাদের সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে সমগ্র জাতি। এই মহান দায়িত্ব পালনে আপনাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

আমাদের দেশে নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নেই। কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন। কখনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। আমাদের নির্বাচনের কোনো ধারাবাহিক রীতি গড়ে না উঠলেও এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এজন্যই এই নির্বাচনকে আমরা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারিনা। আপনাদের দায়িত্ববোধ নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।

আপনাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতি সামান্য। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাতে ইচ্ছানুযায়ী পছন্দের প্রার্থীকে ভোটটি দিতে পারেন। এই সামান্য চাওয়াই রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০-১২ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সকল অনিয়ম রোধ, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদের দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আপনাদের দায়িত্ব পালনে কোন শিথিলতা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিকের মতো আপনাদের সম্মুখ সমরে সাফল্যের কোন বিকল্প নেই।

নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা। এই পূর্বশর্ত পালনে আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে তাহলে কোনো কার্যক্রমই আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইনের প্রয়োগ করা না হলে সে আইন, আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। তাই আইনসিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা নিজেদের কলঙ্কিত করতে চাই না। আমি জানি আপনাদের কেউই সেই কলঙ্কের ভাগীদার হতে চাইবেন না।

একটা কথা আমি সর্বদা বলে থাকি। আমরা নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ গ্রহণ করেছি। আপনারা আমাদের শপথ গ্রহণের মূল অংশীদার। কারণ আপনাদের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করি। এ ক্ষেত্রে আমাদের শপথ আপনাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং তা আপনাদের দায়িত্ব পালনের ওপর বর্তায়। আপনারাও মনে মনে শপথ গ্রহণ করুন দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্বাচনী কর্তব্য পালনে সবাই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালি ইতিহাসের রূপকার আপনারা। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আপনারা এক মহান দায়িত্ব লাভ করেছেন। একটি শুদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনাদের অবদান জাতির ইতিহাসের গৌরবগাঁথা হয়ে থাকবে। আমাদের উত্তরাধিকারীগণ সেই গৌরবগাঁথায় উদ্দীপ্ত হবে, অনুপ্রাণিত হবে।

জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আজ আমরা কেবল দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারীর সামনে। আমাদের প্রতি কার্যকলাপ, প্রতি পদক্ষেপ সকলেই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সে দিক থেকে এই নির্বাচন আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। একটি মর্যাদাবানে জাতি হিসাবে বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আমরা কিছুতেই আমাদের সম্ভ্রম খোয়াতে পারি না।

৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার। গণতন্ত্রের মূলকথা আইনের শাসন এবং সবার প্রতি সমভাবে আইনের প্রয়োগ। স্বাধীনতার মাধ্যমে সেদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সুখী বাংলাদেশের স্বপ্ন রচিত হয়েছিল। শুদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই স্বপ্নটিকে বাস্তবতায় রূপদান করে আসুন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago