‘নিঃশেষিত সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার করুণ প্রতিচ্ছবি’

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করলো অরিত্রি অধিকারী। তিন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছেও।
Collage
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (বামে) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করলো অরিত্রি অধিকারী। তিন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছেও।

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছে। অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। কিন্তু হত্যাকারী কে? সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষায়তন নাকি পুরো শিক্ষাব্যবস্থা?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটিই আমাদের নিঃশেষিত সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার করুণ প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকরাও ক্ষমতার প্রয়োগ শিখে গেছেন, তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীরা নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছে। এটি পুঁজিবাদের চূড়ান্ত নিদর্শন।”

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা এবং শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক- তা উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, “শিক্ষার্থীবান্ধব ও অবিভাবকসূলভ মনোভাব না থাকলে শিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া আমাদের অগ্রগতির যেমন সুযোগ নেই, তেমনি যোগ্য শিক্ষক ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিও সম্ভব নয়।”

শিক্ষাব্যবস্থার এই অচলায়তন দূর করতে পুরো সিস্টেমকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও মানবিক মানদণ্ডের আলোকে শিক্ষক নিয়োগ হওয়া উচিত। এই পেশার বেতন কাঠামো পরিবর্তন করে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো দরকার। কেবল অপরাধীদের শাস্তি দিলেই হবে না, অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিটি ঘটনার কেস স্টাডি করে, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যাবশ্যক।”

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট ত্রুটি আছে। গত এক দশকে গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ধস নামতে দেখা গেছে। এ যুগে যারা শিক্ষক হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই শিক্ষকতার আদর্শিক মানদণ্ডের অধিকারী নন। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের সেই যোগ্যতা ও মানসিকতা আছে কী না, সেটি নিয়ে আমি সন্দিহান।”

সমকালের শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অনেক দুর্বল উল্লেখ করে এর জন্য গোটা সামাজিক পরিবেশকে দায়ী করেছেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষানীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে ইচ্ছুকদের শিক্ষকতার মানসিকতা রয়েছে কী না, সে ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করা চাই। কারণ, আদর্শবান শিক্ষকদের গড়ে তোলা উৎকৃষ্ট প্রজন্ম দিয়েই সমাজটাকে বদলাতে হবে।”

অন্যথায় এ ধরনের  ঘটনা ঘটতেই থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিড়ালের গলায় ঘণ্টা তো বাঁধতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ঘণ্টাটা বাঁধবে কে?”

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

54m ago