ড. কামালের উপর আক্রমণ: ৪ রাজনীতিকের প্রতিক্রিয়া

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গতকাল (১৪ ডিসেম্বর) হামলার শিকার হন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও এই হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ‘ভাড়াটে’ লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
Collage

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গতকাল (১৪ ডিসেম্বর) হামলার শিকার হন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও এই হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ‘ভাড়াটে’ লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

এর আগে, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ড. কামাল হোসেনকে ‘জামায়াত’ নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে তীব্র সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করেন। যদিও, এ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ড. কামাল।

এ বিষয়টি নিয়ে আজ (১৫ ডিসেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সরকার পক্ষ সর্বোচ্চ হতাশা থেকে এই আক্রমণ করেছে। তা না হলে ড. কামাল হোসেনের উপর আক্রমণ করবে কেন? উনি তো এবারের নির্বাচনে প্রার্থীই নন। এছাড়াও, অন্য একটি কারণ থাকতে পারে, ক্ষমতাসীনরা এই হামলার মাধ্যমে জনগণের মনে ভীতি তৈরি করতে চায়। তারা কাউকে ছাড়বে না, যেই এগিয়ে আসবে তার উপরই হামলা করবে, কেউ যেন ভোট দিতে না যায়। তবে যাই হোক, আমরা মাঠে আছি এবং থাকবো। ভোট থেকে তারা এবার আমাদের আর সরাতে পারবে না।”

সাংবাদিকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করায় ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমালোচনার প্রেক্ষিতে মান্না বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক যে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ড. কামাল হোসেনর উপর হামলা চালিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন তারা। এখন ধামাচাপা হোক বা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো হোক, এই বিষয়টিকে ইস্যু বানাতে চাইছেন তারা। কিন্তু, এটিকে ইস্যু করে হামলাকে জাস্টিফাই করার কোনো মানে নেই।”

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানানোর পর ১৪ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনের গাড়িতে হামলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের উচিত একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অন্যের সম্মান রক্ষা করা। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কারো উপর হামলা করা, আইনভঙ্গ করা- এগুলো মানবিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে এখন উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে ভবিষ্যতে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এটাই প্রথম এবং শেষ।”

নির্বাচন কমিশনকে অন্ধ, বধির ও বোবা উল্লেখ করে অলি আহমেদ বলেন, “ড. কামালের উপর হামলার খবর সবাই জানলো অথচ নির্বাচন কমিশনের টনক নড়লো না। দীর্ঘদিন ধরেই দেশে বিরোধীরা পদে পদে লাঞ্ছিত হয়ে আসছে। সেই দুর্দশা দেখে ড. কামাল হোসেন হয়তো পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে একটি কথা বলে ফেলেছেন। এটি নিয়ে সরকারের লোকজন বিরূপ মন্তব্য না করলেই পারে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, “ড. কামাল হোসেন কোনো সাধারণ মানুষ নন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতার জন্য তার অবদান অপরিসীম। তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। দেশের বর্তমান অচলায়তন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে যিনি কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করছেন, তার উপর যে আক্রমণ, সেটি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার উপর আক্রমণ। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় আমাদের আগামী দিনের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, ক্ষমতাসীনদের এমন আচরণের ফলে তা বিঘ্নিত হচ্ছে। হামলার দায় স্বীকার না করে সাংবাদিকদের ড. কামাল হোসেন কী বলেছেন, সেটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ঠিক নয়। অনেকেই আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন অনেক কিছুই বলে ফেলি। সাংবাদিকদের প্রশ্নটি হয়তো উনার কাছে খারাপ লেগেছিল, তাই উনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আপনারা ড. কামাল হোসেনের উপর হামলাটি দেখলেন, কিন্তু তিনি যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর হামলা করলেন, গণমাধ্যমের উপর হামলা করলেন সেটি দেখলেন না। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে অপরাধীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি যে ঔদ্ধত্য দেখালেন, সেটি দেখলেন না। তিনি অবশ্যই সম্মানিত ব্যক্তি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, যখন আমার চেতনার উপর হামলা হবে, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা হবে, সেটাকে আমি ভালোভাবে নিবো কীভাবে?”

“মানুষ শুনেছে, প্রকাশ্যে তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কী আচরণ করেছেন। কীভাবে তিনি অপরাধীদের সঙ্গে মজেছেন। এখন ড. কামাল হোসেনের জন্য সবকিছু যদি উন্মুক্ত থাকে, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষেরা যাবো কোথায়?” প্রশ্ন খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর।

আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “তবে, যেকোনো ধরনের শারীরিক হামলা অবশ্যই নিন্দনীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও রাজাকারদের হত্যা না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেই সময় থেকেই আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এসেছি। এখন হামলা কারা করলো, কী কারণে করলো, কার কতটুকু আঘাত লেগেছে, সব দায়িত্ব তো আবার আমরা নিতে পারবো না। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তো কেবল আওয়ামী লীগের জায়গা নয়। এটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। ড. কামাল হোসেন যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলেছেন, অপরাধীদের নিয়ে গেছেন, তখন কে কোথায় কি করেছে, সেটির দায়িত্ব তো আমাদের নয়।”

“কেউ যদি নিজে আক্রমণকে আলিঙ্গন করেন, কেউ যদি আক্রমণকে উসকে দেন, সেক্ষেত্রে তো বলার কিছু নেই। আমার মনে হয় ড. কামাল হোসেন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক সেটিই চাইছিলেন,” মন্তব্য করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago